চাহিদা বাড়ায় লেবু চাষে ঝুঁকছেন দিনাজপুরের কৃষক
করোনাকালে বেড়েছে লেবুর চাহিদা। ফলে লেবু চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় কৃষকরা ঝুঁকেছেন বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষে। চলতি বছর জেলায় আট হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষি বিভাগের সহায়তায় উচ্চ ফলনশীল সিডলেস ও এলাচি জাতের লেবু চাষের মাধ্যমে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তারা।
দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ জানান, গত দুই বছর থেকে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত ও শনাক্ত বেড়ে যায়। এতে চিকিৎসকদের পরামর্শে মানুষ বেশি করে লেবু খেতে শুরু করে। ফলে বাজারে লেবুর চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। লেবুর বাজার দর বেশি হওয়ায় গ্রামে অনেকে এখন লেবুর চারা রোপণ লেবু চাষের আগ্রহ বাড়িয়েছে। ফলে এবার কৃষি অধিদপ্তর জেলায় আট হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
লেবু এমন একটি ফল, যা সারা বছর ধরে ফলন দেয়। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অতিরিক্ত লেবুর ফলন আশা করছে কৃষি বিভাগ। এ লক্ষ্যে কৃষি অধিদপ্তরের মাঠকর্মীরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে লেবু চাষে আগ্রহী করে তুলছেন।
দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের গবেষণায় নিয়োজিত সহকারী পরিচালক রতন কুমার রায় জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের রোগতত্ত্ব বিভাগ গবেষণা করে কৃষি অধিদপ্তরকে লেবু চাষে আগ্রহী করার তাগিদ দিয়েছে। চলতি বছর এ জেলায় ১৩টি উপজেলা, নয়টি পৌরসভা ও ১০৩টি ইউনিয়ন পরিষদে বসবাসরত প্রত্যেক বাড়িতেই লেবুর চারা রোপণে আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে। কৃষি অধিদপ্তর থেকে উচ্চ ফলনশীল বারোমাসি সিডলেস ও এলাচি জাতের লেবু চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এ জাতের লেবু চারা রোপণের তিন মাস পর থেকেই ওই গাছে লেবু ধরতে শুরু করে। লেবু চারা রোপণের পাঁচ মাস থেকেই লেবুর ফলন সংগ্রহ করা যায়।
সিডলেস ও এলাচি জাতের লেবু চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন দিনাজপুর সদর উপজেলার চকরামপুর গ্রামের গৌতম চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, ‘কেউ যদি ৪৮ শতাংশ জমিতে লেবু চাষ করেন, তাহলে খরচ বাদ দিয়ে বছরে প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ হবে। এ ছাড়া লিচু, আম বাগানের চারপাশে ঘেরা বা বেড়া হিসেবে এবং গাছের মাঝখানেও লেবু চাষ করা সম্ভব।’
গৌতম চন্দ্র দাস জানান, তিনি তাঁর লিচু বাগানের পাশাপাশি লেবু চাষ করেছেন। লেবু চাষের পাশাপাশি লেবুর চারাও বিক্রি করেন। গত একমাসে তিনি ১৫ হাজার টাকার লেবুর চারা বিক্রি করেন। লেবু চাষ করে অনেকেই নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। এজন্য জেলাতে অনেকেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লেবু চাষ করছেন। লেবু চাষে তেমন একটা খরচ নেই বললেই চলে। ভালো ফলনের জন্য বছরে দুই থেকে তিনবার সার প্রয়োগ করলেই হবে। তবে লাল মাকড় এবং পাতা কোঁকড়ানো রোগের জন্য মাসে একবার স্প্রে করলেই হবে। একবার লেবু গাছ রোপণ করলে ১৫ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়।
গৌতম চন্দ্র দাস আরও জানান, পাঁচ বছর আগে তিনি এলাচি জাতের ২০টি চারা রোপণ করেন। এরপর ক্রমান্বয়ে আরও লেবু চারা রোপণ করতে থাকেন। বর্তমানে বাগানে এলাচি লেবু গাছ আছে ৪০০টি। এরপর গত আট মাস আগে সিডলেস জাতের আরও কিছু লেবুর চারা রোপণ করেন। গত বছর তিনি প্রায় দুই লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেন। গত বৈশাখ মাসেই ৮০ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করেন। বর্তমানে প্রতি পিস লেবু পাইকারি দুই টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই লেবু চাষে সারা বছর লাভবান হওয়া যায়।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ বলেন, ‘লেবু বাগানের মালিকদের সার্বক্ষণিক সঠিক পরার্মশ দিয়ে আসছি। লেবু চাষ লাভজনক হওয়ায় এরই মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অসংখ্য বাগান গড়ে উঠেছে। অধিক লাভজনক এ লেবু বাড়ির উঠানসহ পতিত জমিতে চাষ করে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারে।’