চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা : সাক্ষ্য দিলেন ভাই
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় বাদী ও নিহতের ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। আজ রোববার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জাকির হোসেনের আদালতে এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল।
সকালে মামলার বাদী নিহতের ভাই তৌহিদুল ইসলাম সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে হাজির হন। এরপরে আদালতে মামলার বাদী ও নিহতের ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী জবানবন্দি দেন। তার সাক্ষ্য শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা শুরু করেন। দুই আসামির পক্ষে জেরা শুরু শেষ হলেও অন্যান্যদের হয়নি। পরবর্তীতে বিচারক আগামী মঙ্গলবার বাকি জেরা এবং সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন।
আদালতের সরকারি কোঁসুলি সাদিয়া আফরিন শিল্পী এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
গত ৫ এপ্রিল রাত ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে আশীষ কুমার রায় চৌধুরীকে একটি কালোকাচের সাদা গাড়িতে করে র্যাব সদর দপ্তরের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ বহরে আরও তিনটি মাইক্রোবাস ছাড়াও র্যাবের একাধিক গাড়ি ছিল। এর আগে, ওই দিন রাত সাড়ে ৯টায় আশীষ রায় চৌধুরীর বাসায় অভিযান শুরু করে র্যাব।
অভিযান শেষে র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আশীষ রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৮ তারিখে ওয়ারেন্ট (গ্রেপ্তারি পরোয়ানা) জারি হয়। তিনি এখানে আত্মগোপন করেছিলেন। তাঁর পরিবারের সদস্যরা এখানে ছিল না।’
সেদিন খন্দকার আল মঈন জানান, অভিযান চলাকালীন ২৩ বোতল মদ পেয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া এ সময় তাঁরা দুই নারীকেও আটক করেন। ওই দুজনের সঙ্গে আশীষ কুমার রায় চৌধুরীর কী সম্পর্ক, তা জানার জন্য জেরা করা হবে।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, আশীষ চৌধুরীকে যে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা তাঁর নামে নয়, একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নামে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। সেটা আশীষ চৌধুরী নেননি। ওই বাসায় একাধিক নারীর যাতায়াত ছিল।
১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে নায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনার দিনই নিহত সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় আদনান সিদ্দিকীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারি আসামি আদনান সিদ্দিকীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আশীষ কুমার রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, ফারুক আব্বাসী ও সানজিদুল ইসলাম ইমনকে আসামি করা হয়।
অভিযোগপত্রে যা আছে
তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে বলেন, “বনানী জামে মসজিদের পাশে আবেদীন টাওয়ার। সেই টাওয়ারের অষ্টম তলায় ‘সুপার ট্রাম্পস ক্লাব’। এই ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশীষ কুমার রায় চৌধুরী। সেই ক্লাবে আসামাজিক কার্যকলাপ, নাচ গান, মদ্য পান ও মহিলা দ্বারা অশ্লীল নৃত্য হতো এবং সেখানে আপত্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হতো।”
তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সোহেল চৌধুরী ট্রাম্পস ক্লাবে এমন আপত্তিকর পরিবেশ বন্ধ করার জন্য মসজিদ কমিটির লোকজন নিয়ে যান। তিনি সেখানে ক্লাব বন্ধ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই সেই ক্লাবে নারী বান্ধবীকে নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ে সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর গোলমাল হয়। সোহেল চৌধুরী আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গালি দেয়। পরে সোহেল চৌধুরীর বন্ধু কালা নাসির আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গুলি করতে গেলে তিনি বাথরুমে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন।’
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, ‘মেজর (অব.) হাফিজ তাদের অনুরোধ করে সোহেল চৌধুরীকে নামিয়ে দেন। পরে বিভিন্ন সময় বান্টি ইসলাম ও আশীষ কুমার রায় চৌধুরীর সঙ্গে ট্রাম্পস ক্লাবে সোহেল চৌধুরীর বাকবিতণ্ডা হয়। সোহেল চৌধুরীর কারণে ট্রাম্পস ক্লাবের কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। তাঁরা তখন সোহেল চৌধুরীকে ভয়ভীতি দেখান। ঘটনার দিন সোহেল চৌধুরী বনানীর সেই ট্রাম্পস ক্লাবে যেতে চান। তখন তাঁকে প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আবার রাত তিনটায় ট্রাম্পস ক্লাবের সম্মুখে এলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামিরা পেশাদার খুনি দিয়ে গুলি করে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করে বলে প্রমাণ হয়েছে।’