জল্লাদ শাহজাহান ঝুলিয়েছেন যাদের
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অনেক আসামির ফাঁসির রায় বাস্তবায়নে কারা কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করে আলোচিত হয়ে উঠেছেন জল্লাদ শাহজাহান। সর্বশেষ আজ শনিবার দিবাগত গভীর রাতে তিনি তাঁর সহযোগীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদের ফাঁসি রায় কার্যকরে ভূমিকা রাখেন।
কিন্তু কে এই জল্লাদ শাহজাহান? তাঁকে নিয়ে রয়েছে নানা কৌতুহল।
কারা সূত্রে জানা যায়, জল্লাদ শাহজাহানের পুরো নাম মো. শাহজাহান ভূঁইয়া। তিনি ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম হাসান আলী ভূঁইয়া, মাতা সবমেহের। তিনি পড়াশোনা করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত।
জানা যায়, শাহজাহান স্বাধীনতার পর রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এলাকায় ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, ছিলেন বন্ধুবৎসল। কিন্তু এলাকায় একটি ঘটনার পর সালিশে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। তারপরই তিনি প্রতিশোধ নিতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং অপরাধ জগতে পা বাড়ান বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়।
১৯৭৯ সালে ঢাকা থেকে নরসিংদী যাওয়ার পথে পুলিশ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই অসংখ্য মামলা দায়ের ছিল। গ্রেপ্তারের পর সেসব মামলার বিচার শুরু হয়। বিভিন্ন সময়ে তাঁর ৩৬টি মামলার রায় হয়েছে। এতে আদালত তাঁকে ১৪৩ বছরের সাজা দেন। তিনি গত প্রায় চার দশক ধরে কারাগারে আছেন।
কারা সূত্র জানায়, ১৯৮৯ সালে সহযোগী জল্লাদ হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে শাহজাহান তার জল্লাদ জীবনের সূচনা করে। এরপর কারাগারে মৃত্যুদণ্ড বাস্তবায়নের সময় আসলেই তার ডাক পরে। টানা আট বছর এই কাজ করার পর ১৯৯৭ সালে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে প্রধান জল্লাদ বানায়।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, একটি ফাঁসির রায় বাস্তবায়ন করতে প্রধান জল্লাদের সঙ্গে ছয়জন সহযোগী লাগে এবং ফাঁসির রায় কার্যকর করলে প্রত্যেক জল্লাদের দুই মাস চার দিন করে কারাদণ্ড মওকুফ হয়। এ ছাড়া কারাগারে যারা জল্লাদ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকেন কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শাহজাহান তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।
শাহজাহান ভূঁইয়া জল্লাদ হিসেবে এ পর্যন্ত মোট ৩৪ জনকে ফাঁসি দিয়েছেন। এর আগে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচ খুনিকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়েছেন। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রথম যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরে জল্লাদের ভূমিকা পালন করেন তিনি।
এ ছাড়া কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যা মামলার আসামি খুকু, মনির, ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানের ফাঁসি কার্যকর করেন জল্লাদ শাহজাহান। এদেশে তিনিই একমাত্র জল্লাদ যিনি একরাতে একাধিক আসামিকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়েছেন।
যুদ্ধাপরাধী ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরে জল্লাদের ভূমিকা পালন করেছেন শাজাহান ও রাজু।