জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গ : সুপ্রিম কোর্টে দু’পক্ষের বিক্ষোভ, সংবাদ সম্মেলন
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/08/29/court.jpg)
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ করেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা।
আজ রোববার দুপুরে সমিতি ভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন। প্রথমে সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সমিতিতে নির্বাচিত বিএনপির সমর্থক আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে সমিতির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিক উল্লাহর নেত্বত্বে সমিতি ভবনের এক নম্বর হলে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সমিতিতে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সমর্থক আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদক যখন সংবাদ সম্মেলন করেন তখন তাঁর কক্ষের বাইরে সভাপতির কক্ষের সামনে দুই পক্ষের আইনজীবীরা পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ করেন।
‘জিয়াউর রহমানের অবদান মীমাংসিত সত্য’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অসামান্য অবদান একটি মীমাংসিত সত্য। ১৯৭১ সালে দিশেহারা এ জাতির ক্রান্তিকালে তৎকালীন মেজর জিয়া যদি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করতেন ও চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা না দিতেন, তাহলে আজকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হতো কি-না সেটাই যেখানে প্রশ্ন, সেখানে মুক্তিযুদ্ধকালে রণাঙ্গনে শহীদ জিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন উত্থাপন মুক্তিযুদ্ধের প্রতি চরম অবমাননার শামিল। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীতে সরকার একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রণাঙ্গনে যে সাহসিকতা ও ভূমিকা রেখেছিলেন তার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ‘বীর উত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করে।
সম্পাদক আরও বলেন, জিয়াউর রহমানের মতো এমন একজন বীর সেনানী এবং সফল রাষ্ট্রনায়ক সম্পর্কে তাঁর চরিত্রে কালিমা লেপনের যে অপচেষ্টা অতিসম্প্রতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে করা হয়েছে, সেটি অত্যন্ত বিভ্রান্তিমূলক এবং ইতিহাসের মীমাংসিত সত্যের বিকৃতি।
‘জিয়াউর রহমান সামরিক বাহিনীতে গুপ্তহত্যা চালিয়েছেন’
লিখিত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিক উল্লাহ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও জিয়াউর রহমানসহ কিছু ব্যক্তি পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে কনফেডারেশন করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিলেন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু যখন দেশ গড়ার কাজে ব্যস্ত, তখন জিয়াউর রহমান দেশে অরাজক সৃষ্টিকারী গণবাহিনী ও সর্বহারা বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতা করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কিছু দুষ্কৃতকারী সৈনিক জিয়া ও মোশতাকের ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য সফল করতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে। তিনি বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তীতে খুনি জিয়াউর রহমান সামরিক বাহিনীতে গুপ্তহত্যা, রাজনীতিবিদ হত্যাসহ এহেন কর্মকাণ্ড নেই যা করেননি।
অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিক উল্লাহ সমিতির সমিতির সম্পাদকের সংবাদ সম্মেলনেরও নিন্দা জানিয়ে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারকে (সমিতি) দলীয় প্ল্যাটফরম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ হয়েছে : অ্যাটর্নি জেনারেল
পরে এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত অনেক সদস্য রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এখানে সভাপতি-সম্পাদক হয়ে থাকেন। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ব্যবহার করে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বক্তৃতা-বিবৃতি দেওয়া হয়নি। সম্পাদক তাঁর নিজের বক্তব্য দেন। সভাপতি তাঁর নিজের বক্তব্য রাখেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের প্যাড ব্যবহার করে করে বিবৃতি এটা মনে হয় প্রথমবারের মতো হয়েছে। এতে সুপ্রিম কোর্ট বারে একসঙ্গে কাজ করার যে ঐতিহ্য সেটা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। আজকে শুনলাম, পাল্টাপাল্টি স্লোগান হয়েছে। এর মাধ্যমে পরিবেশটা কিন্তু বিনষ্ট হবে।’