টানা খরায় ঝরে পড়ছে আমের গুটি
‘আমের আনা মাছের পাই, টিকলে পরে কে কত খাই’ চিরায়ত এই প্রবাদ মেনে রাজশাহীর আমচাষিরা এখন গাছে আমের গুটি টিকিয়ে রাখতে ব্যস্ত। গাছের সঠিক পরিচর্যাই এনে দিতে পারে বাম্পার ফলন।
আমচাষি, ফল গবেষক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানান, গাছে এবার ভালো মুকুল এসেছিল। আগাম মুকুল আসা গাছগুলোতে এখন আমের কড়ালি গুটি। আর দেরিতে মুকুল আসা গাছে মোটরদানা গুটি। কিন্তু চারঘাট ও বাঘা উপজেলার আমচাষিরা পড়েছে চরম অনিশ্চয়তায়। বৃষ্টিহীন প্রচণ্ড খরায় গাছের গুটি আম শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। সেই আম এখন বিক্রি করা হচ্ছে মাত্র দুই টাকা কেজি দরে।
এভাবে প্রতিদিনই চারঘাট-বাঘার আম বাগানগুলোতে ঝরছে মণকে মণ আমের গুটি। এতেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে আমের সঙ্গে জড়িত চাষি ও মালিকরা। প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টি না হওয়ায় এমনটা হচ্ছে বলে দাবি আমচাষিদের।
সরেজমিন চারঘাট ও বাঘা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি আমবাগানে ব্যাপক আমের গুটি ঝুলছে। গুটিগুলো টিকে থাকলে চলতি বছর আমের বাম্পার ফলনের আশা এখানকার চাষি, ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকেদের। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাঁচ মাস ধরে এ অঞ্চলে বৃষ্টি হয়নি। এতে আমের গুটি টিকিয়ে রাখাই এখন দায়। দ্রুত সময়ে মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টির দেখা না গেলে আমের ফলনে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন আমচাষিরা।
চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের কালুহাটি গ্রামের আম চাষি ও বাগানমালিক বাহাদুর রহমান বলেন, ‘চলতি বছরে আমগাছে ব্যাপক আমের গুটি রয়েছে। তবে প্রচণ্ড খরায় আম বাগানগুলোর মাটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। আর এতে মাটিতে রস না থাকায় আমগাছে ঝুলে থাকা গুটিগুলো ঝরে পড়ছে। প্রতিদিন মণে মণে আম ঝরছে বাগান থেকে। খুব শিগগিরই প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টির না হলে চারঘাট-বাঘার আম চাষিদের চরম লোকসান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
উপজেলার রায়পুর এলাকার আমচাষি শামসুল হক বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়া না হলে এ বছর যে পরিমাণ আমের গুটি এসেছে, তাতে আমে ব্যাপক লাভবান হওয়ার কথা। তবে বর্তমানে যে পরিমাণ আমের গুটি ঝরছে, তাতে লাভের চেয়ে লোকসানের আশঙ্কাই বেশি।’
বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ এলাকার বাগানমালিক মুনছুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টির দেখা না পেলে আমের ফলনে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। বৃষ্টি না হওয়ায় আমগাছের গোড়ার মাটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়ছে। বালতিতে করে পানি দিয়ে তো গাছের গোড়ার মাটি ভিজানো সম্ভব নয়। তার পরও চেষ্টা করছি, আমের গুটি টিকিয়ে রাখার জন্য।
চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার বলেন, ‘কয়েক মাস ধরেই এ অঞ্চলে বৃষ্টি নেই। ফলে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। তাপমাত্রাও দিন দিন বাড়ছে। অতিরিক্ত খরায় কিছু আমের গুটি ঝরছে। বাগানের মাটি শুকিয়ে গেলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য আমচাষিদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি আমাদের পরামর্শ নিয়ে চাষিরা লাভবান হবে।’