ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি দেওয়ান লালন আর নেই
ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত পুলিশ সুপার (এসপি) দেওয়ান লালন আহমেদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে দেওয়ান লালন স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, এক বোন, এক ভাইসহ বহু আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার (লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া) দেওয়ান লালন আহমেদ আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে মারা গেছেন।
দেওয়ান লালনের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার ছাওয়ালী গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মো. নুরুল ইসলাম এবং মা রওশন আরা বেগম।
দেওয়ান লালন আহমেদ ২৪তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচে ২০০৫ সালের ২ জুলাই সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তিনি এ মাসের ৭ জুলাই ঢাকার ট্যুরিস্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে যোগদান করেন।
তাঁর নামাজে জানাজা আজ বাদ আসর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে এসআই শিরু মিয়া মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে এবং আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
আইজিপির শোক
দেওয়ান লালন আহমেদের মৃত্যুতে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এক শোক বাণীতে বেনজীর আহমেদ বলেন, দেওয়ান লালন আহমেদ একজন প্রতিভাবান কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর অকালমৃত্যুতে আমরা একজন দক্ষ কর্মকর্তাকে হারালাম।
আইজিপি মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
চাকরির পাশাপাশি পুলিশের এই কর্মকর্তা গীতিকার ও লেখক হিসেবেও বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। করোনা মহামারির সময় পুলিশ সদস্যদের মনোবল বাড়াতে দেওয়ান লালনের ‘দুঃসময়ের হাল ধরা নাবিক মানবিক আর নির্ভীক-বাংলাদেশ পুলিশ’ শিরোনামের গানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইউটিউবে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। গান দুটির লেখকও তিনি। গানটিতে সুর ও কণ্ঠ দেন শিল্পী অটামনাল মুন।
দেওয়ান লালন আহমেদের পাঁচ শতাধিকের বেশি গান রয়েছে। সিনেমা, নাটক, সমসাময়িক বিষয়, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, মা-বাবা, প্রেম-বিরহ নিয়ে তাঁর গান উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া তিনি মাটি মানুষের চিরায়ত বোধের লোকগান, লালন ফকিরের মানুষতত্ত্ব নিয়েও গান লিখেছেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তার বাবা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। স্কুলজীবনে শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা ছিল লালন আহমেদের। তারপর লেখালেখির প্রতি আগ্রহ শুরু। তার পাঁচটি বই প্রকাশিত হয়েছে।
২০১৬ সালে ‘বাবার চোখে মুক্তিযুদ্ধ’ গ্রন্থ দিয়ে লালনের প্রথম বই প্রকাশ। বইটি পাঠকের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। মুক্তিযোদ্ধা বাবার কাছ থেকে শোনা অভিজ্ঞতা বইটিতে যেমন ফুটে উঠেছিল, তেমনি ফুটে উঠেছিল বাবার প্রতি সন্তানের ব্যাকুল ভালোবাসা ও বাবার শূন্যতার হাহাকার।
‘পুলিশের খেরোখাতা’ নামে একটি গ্রন্থে সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশের আত্মিক মেলবন্ধন তুলে ধরেছিলেন পুলিশ সুপার লালন আহমেদ। বইটি ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়। প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসকদের পরাধীনতার কবলে বেনিয়ারা নিজেদের স্বার্থে পুলিশকে কীভাবে জনগণের বিরুদ্ধে নানাভাবে ব্যবহার করেছে, তা-ই বইটিতে তুলে ধরেন তিনি।
২০১৮ সালে শিশুতোষ ছড়া নিয়ে ‘বিতং বনে বনবনিয়ে’ প্রকাশিত হয়। ২০২০ সালে এক রঙা এক ঘুড়ি প্রকাশনী থেকে দুটি বই প্রকাশিত হয় পুলিশের এই কর্মকর্তার। এর মধ্যে একটি পুলিশের ‘খেরোখাতা দ্বিতীয় পর্ব’ এবং অন্যটি ‘সাধুসঙ্গে ডুবাও অঙ্গ'।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ নিয়েও চারটি গান লিখেছেন দেওয়ান লালন। সেগুলো হলো- ‘বঙ্গবন্ধু, শতবর্ষের মহীরুহ, পাখিরা কাঁদে ও শেখ সাহেব’। এছাড়া ‘মায়ের নেই বিকল্প, মা’, ‘ওরে প্রাণপ্রিয় পুত্র’, ‘জারুল ফুল’, ‘প্রেম আছে বলে’, ‘যোজন যোজন দূরে’, ‘ভালো থেক’, ‘বুকের ভিতর আরেকটি বুক’- এমন অনেক গান বেশ জনপ্রিয়।
এ ছাড়া অটমনাল মুনের সঙ্গেও তিনি অনেকগুলো গান বানিয়েছেন। যেমন- ‘ভালো থেকো’, ‘প্রেম আছে বলে’, ‘যোজন যোজন দূরে’, ‘যাও মেঘ আকাশকে বলো’, ‘কষ্ট যন্ত্রণা বেদন’, ‘বুকের ভেতর আরেকটি বুক’, ‘স্বপ্ন সুখের ঝুলি’, ‘এমন আপন কেউ হবে না’ ইত্যাদি।
২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘পাসওয়ার্ড’ গানটির জন্য ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে’ আধুনিক গান ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে স্বীকৃতি পান দেওয়ান লালন।