ডাবিং রুমে সালমান-শাবনূরকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখেন সামিরা
প্রায়ই নায়ক সালমান শাহের বাসায় যেতেন নায়িকা শাবনূর। করতেন যখন-তখন টেলিফোনও। কিন্তু সালমানের স্ত্রী সামিরার এসব পছন্দ ছিল না। তাই এসব বিষয় নিয়ে সালমানের সঙ্গে সামিরার মাঝে মাঝেই ঝগড়া হত।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডির পিবিআই সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে সালমান শাহের স্ত্রী সামিরার বরাত দিয়ে পিবিআইয়ের মহাপরিচালক ও পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার এসব তথ্য জানান।
সামিরার বরাত দিয়ে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘চিত্রনায়িকা শাবনূর নায়ক সালমান শাহের বাসায় প্রায়ই আসতেন এবং যখন-তখন টেলিফোন করতেন। এটি সালমানের স্ত্রী সামিরার পছন্দ ছিল না। ৫ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর আগের দিন সামিরা এফডিসিতে যান ছবির ডাবিং দেখতে। এফডিসিতে গিয়ে দেখেন তাঁরা দুজন (সালমান-শাবনূর) ডাবিং রুমে ঘনিষ্ঠভাবে বসে আছেন। সে সময় সামিরা রাগ করে বের হয়ে যান। পরে সালমান শাহ, তাঁর স্ত্রী ও পরিচালক বাদল খন্দকার একসঙ্গে বাসায় চলে আসেন।’
বনজ কুমার মজুমদার আরো বলেন, ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার সময় শাবনূর নায়ক সালমানকে মোবাইলে ফোন করেন। কিছুক্ষণ পর তিনি আবার ফোন করেন। দুবারই ফোন করার সময় সালমান শাহ বাথরুমে যান। বাথরুমে গিয়ে চিৎকারে করে শাবনুরকে তিনি বলেন, ‘তুমি আর কখনো আমার বাসায় ফোন করবা না।’
১২টার সময় যখন আবার ফোন করেন তখন সালমান একটি টেবিল ফ্যান ভেঙে ফেলেন যেটি শাবনূর তাঁকে উপহার দিয়েছিলেন। একটি সিটিসেল ফোনও ভেঙে ফেলেন, যেটিও শাবনূর তাঁকে দিয়েছিলেন। এরপর সামিরা বাড়ি থেকে বের হয়ে নিচে নেমে যান। পরে সামিরাকে বুঝিয়ে উপরে আনা হয়। এরপর রাত ৩টা-৪টার দিকে তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েন।’
সামিরার বরাত দিয়ে বনজ কুমার মজুমদার আরো বলেন, ‘সকাল ৯টার সময় তাঁর শ্বশুর (সালমানের বাবা) বাসায় আসেন। তাঁকে নাস্তা খাওয়ান এবং ৫০ হাজার টাকা দেন। তিনি শুয়ে শুয়ে টিভি দেখতেছিলেন। এক সময় দেখেন, সালমান শাহ চলে গেছেন। চলে যাওয়ার সময় সালমান শাহ অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন। এটাই তাঁর শেষ দেখা। এরপর পাশের একটি রুমের দরজা বন্ধ দেখে সবাই ডাকাডাকি করছিলেন কিন্তু কেউ দরজা খুলছিল না। একটা সময় চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখেন সালমান শাহ ঝুলতেছে। এটাই সালমানের স্ত্রীর বক্তব্য।’
পিবিআইয়ের তদন্তের সময় ঘটনার সময় উপস্থিত ঘটনা সংশ্লিষ্ট ৪৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ১৬১ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়। এদের ভেতরে সালমান শাহের বাসার কয়েকজন কর্মচারীর বরাত দিয়ে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘সালমান শাহের বাড়ির কর্মচারীরা সবাই কিন্তু পিবিআইকে জানিয়েছে, শাবনুরকে নিয়ে প্রায়ই সামিরার সঙ্গে সালমানের স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়াঝাটি হত। ঘটনার এক মাস আগে সামিরা রাগ করে চট্টগ্রামে চলে যান। সালমান শাহ নিজেই তাঁকে চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে আসেন। চট্টগ্রাম থেকে ফিরে আসার পরও তাদের দুজনের ভেতরে শাবনূরকে নিয়ে ঝামেলা হতে দেখেছে জবানবন্দি দেওয়া অনেকেই।’
সালমান শাহ হত্যা মামলার অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৩০ মার্চ দিন রয়েছে। গত ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহ এ আদেশ দেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জনপ্রিয় চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ নিহত হন। সে সময় তাঁর বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছিলেন। ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই সালমানের বাবা তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে—এমন অভিযোগ এনে মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে একটি অভিযোগ করেন।
ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিএমএম আদালত অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যার অভিযোগটি একসঙ্গে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেন।
পরবর্তী সময়ে একই বছরের ৩ নভেম্বর সিআইডি ঘটনাটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে ঢাকার সিএমএম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করে সিআইডি। একই বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালত সিআইডির দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেন।
সিআইডির দাখিল করা প্রতিবেদনে সালমানের বাবা সন্তুষ্ট না হয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করেন।
ওই রিভিশন মামলার ওপর শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি ফের বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। এরপর ১২ বছর ধরে এ মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।
২০১৪ সালের ৩ আগস্ট মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) বিকাশ কুমার সাহার কাছে মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনেও সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
পরবর্তী সময়ে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সিএমএম আদালতে আরেকটি নারাজি দাখিল করেন। এর শুনানি শেষে বিচারক মামলাটি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা করেন। পরে ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েস রিভিশন মঞ্জুর করেন।
এরপর ২০১৬ সালের শেষ দিকে পিবিআইকে নতুন করে তদন্তভার দেওয়া হয়। সেই তদন্তের সূত্র ধরেই আজ কথা বলেন পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।