তালতলা কবরস্থানে সাবেক দুই সেনাসদস্যের লাশ দাফন
রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে করোনায় মারা যাওয়া এবং করোনা সন্দেহে এখন পর্যন্ত মোট ১৪৭ জনের লাশ দাফন করা হয়েছে। এই ১৪৭ জনের ভেতরে দুজন সাবেক সেনাসদস্যও রয়েছেন। দুজনের একজন মারা গেছেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। আর অন্যজনকে দাফন করা হয়েছে করোনা সন্দেহে।
সাবেক এ দুই সেনাসদস্য ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁদের দুজনকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে একই সময়ে দাফন করা হয়। এর আগে সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে কবরস্থান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। ওই সময় তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন।
সাবেক এ দুই সেনার পরিবারের সদস্যরা লাশ দাফনে অংশ নিলেও অধিকাংশ মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা দাফন ও জানাজায় অংশ নিতে পারেননি। কারণ, ওই পরিবারের সদস্যরা তখন কোয়ারেন্টিনে ছিলেন।
কবরস্থান থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত ১০০টির বেশি লাশ দাফনের সময় পরিবারের কোনো সদস্য আসতে পারেননি বা আসেননি।
তালতলা কবরস্থানের স্টাফ ইমাম মো. নাসির উদ্দিন আজ শুক্রবার এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সাবেক এই দুই সেনাসদস্যসহ তালতলা কবরস্থানে মোট ১৪৭ জনের লাশ দাফন করা হয়েছে। তবে তাদের ভেতরে সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি। অনেকে আছে, যাদের করোনা সন্দেহে দাফন করা হয়েছে।’
নাসির উদ্দিন আরো বলেন, ‘সাবেক এ দুই সেনাসদস্য গত বুধবার সিএমএইচে মারা যান। তাঁদের মধ্যে একজনের বয়স ৬০ বছর। তাঁর বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদরে। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আরেকজনের বয়স ৭৩ বছর। তাঁর গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়ায়। তবে তাঁকে করোনা সন্দেহে দাফন করা হয়েছে। তাঁর নমুনার পরীক্ষার ফল পেলে জানা যাবে, তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না।’
নাসির উদ্দিন বলছিলেন, ‘গত ২৫ মার্চ থেকে আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এখানে করোনায় আক্রান্ত ও সন্দেহে মোট ১৪৭টি লাশ দাফন করা হয়েছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার সর্বাধিক ২২ জনের লাশ দাফন করা হয়েছে। এ ছাড়া গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার ১২টি করে লাশ দাফন করা হয়েছে। আজ সকালে একটি লাশ দাফন করা হয়েছে। গত ১০ থেকে ১২ দিন ধরে গড়ে ১০টি লাশ দাফন করা হচ্ছে এখানে। তবে এই ১৪৭ জনের লাশের মধ্যে ১০০টির বেশি লাশ দাফনের সময় পরিবারের সদস্যরা কবরস্থানে আসেননি। কারণ, তাঁরা ছিলেন কোয়ারেন্টিনে। বাকি লাশগুলো দাফনে পরিবার ও আত্মীয়স্বজন এসেছিলেন। তবে লাশ দাফন করতে যেসব মানুষ এখানে এসেছিলেন, দাফন শেষে তাঁরাও কোয়ারেন্টিনে চলে গেছেন।’
এই ইমাম আরো বলেন, ‘দাফন করা সব লাশ আমরা করোনার লাশ হিসেবেই দাফন করেছি। যদিও কিছু লাশ করোনা সন্দেহে দাফন করা হয়েছে। দাফনের পর নমুনা পরীক্ষায় অনেকের করোনা নেগেটিভ এসেছে। করোনা নেগেটিভ আসার পর অনেকের পরিবার কবরস্থানে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, কান্নাকাটি করেছেন। এ ছাড়া দু-একজন লাশ দাফনের পর এসেছেন, কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কেঁদেছেন। লাশের সঙ্গে আসতে না পারার জন্য কবর জিয়ারত করে ক্ষমাও চেয়েছেন। এই কবরস্থানে আল মারকাজুল ইসলামী, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ও রহমতে আলম নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান লাশ দাফন করে আসছে।’