দালালের মাধ্যমে দেশে এসেছেন সাংবাদিক কাজল, এজাহারে উল্লেখ
ঢাকা থেকে নিখোঁজ ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে যশোরের বেনাপালের রঘুনাথপুর সীমান্তবর্তী গ্রামের মাঠের ভেতর থেকে আটক করেছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। আটকের পর কাজল বিজিবির কাছে স্বীকার করেছেন, তিনি বিনা পাসপোর্টে ভারতীয় দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে এসেছেন।
বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগ এনে আজ রোববার সকালে রঘুনাথপুর বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার হাবিলদার আশেক আলী সাংবাদিক কাজলের বিরুদ্ধে বেনাপোল পোর্ট থানায় একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারের এসব কথা বর্ণনা করেছেন আশেক। জেলা পুলিশ সূত্রে পাওয়া এজাহারের একটি কপি এনটিভি অনলাইনের হাতে রয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে,গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে বেনাপোল পোর্ট থানাধীন রঘুনাথপুর গ্রামস্থ ২০ এর মেইন পিলার থেকে ১০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে ভারত থেকে হেঁটে আসা ব্যক্তি মো. শফিকুল ইসলাম কাজলকে (৫১) আটক করা হয়। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে কাজল নিজেকে বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয় দিয়ে তাঁর নাম ঠিকানা প্রকাশ করেন।
এজাহারে আরো বলা হয়, নাম ঠিকানা প্রকাশ করার পর কাজল স্বীকার করেন, তিনি অবৈধভাবে বিনা পাসপোর্টে ভারতীয় দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে এসেছেন। আটককৃত ব্যক্তির নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে থানায় এনে এজাহার দায়ের করতে দেরি হলো।
যোগাযোগ করা হলে রঘুনাথপুর বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার হাবিলদার আশেক আলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের জিরো পয়েন্টের কাছে আমরা দায়িত্বরত ছিলাম। হঠাৎ রাত ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে দেখি তিনজন লোক বাংলাদেশের অভ্যন্তরের দিকে আসছিলেন। পরে আমরা তাড়া করলে দুজন ভারতের তার কাটার বেড়ার দিকে দৌড় মারেন। আর কাজল হালকা দৌড়ানোর পর আর দৌড়াতে পারেননি।’
কোথায় ছিলেন জানতেন না সাংবাদিক কাজল
আশেক আলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সে সময় আমরা কাজলকে আটক করি। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে কাজল জানান, তাঁর গ্রামের বাড়ি মেহেরপুর সদরে। তিনি ঢাকাতেই থাকতেন। সে সময় তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে থাকা ওই দুজন ছিলেন ভারতীয় দালাল। তবে তিনি ভারতের কোথায় ছিলেন, কার কাছে ছিলেন এসব কিছুই বলতে পারেননি। সে সময় কাজলকে উদ্ভ্রান্ত এবং অসুস্থ দেখা যায়। তবে একটা বিষয়, থানায় গিয়ে মামলা দায়েরের আগে আমি জানতাম না যে তিনি সাংবাদিক। থানা থেকে ফিরে শুনেছি উনি সাংবাদিক।’
সাংবাদিক কাজলকে দুপুরের দিকে আদালতে পাঠানো হচ্ছিল। সে সময় বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘বিজিবি সাংবাদিক কাজলকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগ এনে একটি মামলা করা হয়েছে। মামলা নম্বর ৫। বিজিবির বক্তব্য, তাঁকে সীমান্ত পিলারের ১০০ গজের ভেতর থেকে আটক করা হয়েছে। সে জন্য বিজিবি ভেবেছে, তিনি ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকেছেন।’
মামুন খান বলেন, ‘আমরা কাজলকে সিজেএম কোর্টে পাঠাচ্ছি এখন। তারপর কোর্ট জামিন দিয়ে তাঁকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবেন নাকি জেলে দেবেন, সেটা কোর্টের সিদ্ধান্ত।’
গত ১০ মার্চ সন্ধ্যায় রাজধানীর হাতিরপুল এলাকার নিজ কর্মস্থল থেকে বের হওয়ার পর পরই নিখোঁজ হন কাজল। কোনো সন্ধান না পেয়ে ১১ মার্চ চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তাঁর স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসী নয়ন। ১৩ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শফিকুল ইসলাম কাজলকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত দেওয়ার দাবি জানায় তাঁর পরিবার।
সাংবাদিক কাজল নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর সন্ধানের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কয়েক দফা কর্মসূচি পালন করেছেন সাংবাদিক সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা।
তবে নিখোঁজের বেশ কয়েক দিন পর সাংবাদিক কাজলের ফোন নম্বরটি বেনাপোলে চালু হয় বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার এসআই মুন্সী আবদুল লোকমান।