দিনাজপুরে দীর্ঘ হচ্ছে করোনায় মৃতদের লাশের মিছিল
দিনাজপুরে লাশের মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত হয়ে লাশের মিছিলে যোগ দিচ্ছে কেউ না কেউ। করোনা ও উপসর্গ নিয়ে গত আটদিনে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। আর করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে ২৯ জন।
এদিকে, গত আট দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ১৮০ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ২২৬ জন।
আজ বৃহস্পতিবার দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
জানা গেছে, গত জুন মাসের ৩০ দিনে মারা যায় ৪৩ জন। অথচ জুলাই মাসের প্রথম আটদিনেই ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে একজন এবং উপসর্গ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে আরও তিনজনসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ২২৬ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৪৫ জন আক্রান্ত হয়েছে পার্বতীপুর উপজেলায়। আর সবচেয়ে কম চারজন আক্রান্ত হয়েছে বিরামপুর উপজেলায়। আর ১৩ উপজেলার মধ্যে ঘোড়াঘাট ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় একজনও আক্রান্ত হয়নি।
এদিকে, মৃত্যুর মিছিল ক্রমাগত বাড়লেও জনসাধারণের মধ্যে সরকারি বিধিনিষেধ মানার কোনো প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আজ পুরো দিনাজপুরের চিত্র ছিল একেবারে স্বাভাবিক। দিনাজপুরে যে বিধিনিষেধ চলমান, তা সকালের চিত্র দেখে বোঝার উপায় ছিল না। এ বেগতিক পরিস্থিতি দেখে দুপুরের পর সেনা সদস্যদের কয়েকটি গাড়ি শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে লোকজনকে বাড়িতে পাঠানোর চেষ্টা করে। ফলে শহর ধীরে ধীরে কিছুটা ফাঁকা হয়। দীর্ঘ সময় সেনা সদস্যরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষকে বাড়িতে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কাউকে শক্তভাবে আবার কাউকে শান্তভাবে বুঝিয়ে তারা বাড়িতে ফেরান। সেনা সদস্যদের এ উদ্যোগ উপস্থিত মানুষের প্রশংসা কুড়ায়।
অনেকেই মনে করে, এভাবে প্রতিদিন সকালে শহরের স্টেশন রোড, বাহাদুর বাজার, লিলিমোড়, মডার্ন মোড়, নিমতলা, মুন্সীপাড়া, সুইহারী, রামনগর মোড়, নিউটাউন বাজারসহ কয়েকটি পয়েন্টে অবস্থান নিলে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন সফল করা সম্ভব হবে। তবে কিছুটা সময় নিয়ে অবস্থান না করলে চোর-পুলিশ খেলার মতো অবস্থা হবে। সেনা সদস্যদের উপস্থিতিতে সবাই লুকাবে, আর চলে গেলেই সবাই বেরিয়ে পড়বে। এমনটাই মনে করছে লিলিমোড়, বাহাদুর বাজার এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী।
পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে খারাপের দিকে গেলেও কেন মানুষ সচেতন হচ্ছে না?
এমন প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শাহ মো. এজাজ-উল-হক বলেন, ‘আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মানুষকে সচেতন করার জন্য সব ধরনের পদ্ধতি প্রয়োগ করছি। তবে দিনাজপুরের পরিস্থিতি ভালো না। এ অবস্থায় মানুষের সচেতনতা ছাড়া মুক্তির কোনো পথ নেই।’