দিনাজপুরে সম্ভাবনার মুকুলে ভরপুর লিচুগাছ
লিচুর রাজ্যের নাম দিনাজপুর। এ জেলার সুস্বাদু লিচু দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও সুনাম কুড়িয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। জেলায় সব উপজেলাতেই কমবেশি লিচু হলেও সদরের মাসিমপুর ও বিরল উপজেলার লিচুর বিশেষ সুনাম রয়েছে। বেদেনা, বোম্বাই, চায়না থ্রি, মাদ্রাজি, কাঁঠালিসহ বেশকিছু লিচুর ফলন ভালো হয়। বেদেনা লিচু দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে।
মৌসুমের শুরুতেই দিনাজপুরের গাছগুলোতে মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে প্রতিটি লিচুগাছ। তাই গাছের যত্ন নিতে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে লিচুচাষি ও লিচু ব্যবসায়ীসহ বাগানের মালিকরা।
লিচুচাষিদের দীর্ঘদিনের দাবি, লিচু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হোক। লিচু সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে দাম যেমন পাবে, তেমনি সুস্বাদু এই লিচু অনেক দিন সংরক্ষণসহ বাজারজাত করা হবে।
লিচু ব্যবসায়ী আরমান জানালেন, সরকার এই দাবি মানলে লিচুর আরও প্রসার ঘটবে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও লিচুর কদর বাড়বে।
দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দিনাজপুরবাসীর লিচু সংরক্ষণাগারের দাবি সরকার মেনে নিলে এ জেলা লিচুসহ কৃষিতে অনেক এগিয়ে যাবে।’
লিচুচাষি সোহেল রানা বলেন, ‘বাগানের প্রতিটি গাছে এবার প্রচুর মুকুল এসেছে। তাই বেশ আনন্দ লাগছে। এ কারণেই শুরু থেকে বাগানের প্রচুর পরিচর্যা করছি, যেন মুকুলগুলো আটকাতে পারি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও ভালো ফলন পাব বলে আশা করছি।’
দিনাজপুরের ১৩ উপজেলায় লিচুর ফলন হলেও দিনাজপুর সদর, বিরল, কাহারোল, ফুলবাড়ী, বিরামপুর ও খানসামা উপজেলায় লিচুর বেশি ফলন হয়। লিচু দিনাজপুরের অর্থকরি ফসলের মধ্যে অন্যতম। এ জেলায় অনেক বাগান মালিক রয়েছেন যাঁরা লিচুর বাগানের ওপরই নির্ভরশীল।
আরেক বাগানমালিক সহিদ বলেন, ‘গতবার মুকুল ভালো এসেছিল, ফলনও ভালো পেয়েছিলাম। এবারও গাছ ভরে মুকুল এসেছে। এখন শুধু একটাই ভয় কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলেই হয়। এবারও আশানুরূপ ফলন পাব ইনশা আল্লাহ।’
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তৌহিদুল ইকবাল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পুরোপুরি মুকুল আসেনি। এগুলোর অনেক ধাপ রয়েছে। আরও কিছুদিন পর এগুলোর ফোকাসিং দেওয়া যাবে। তবে গতবারের তুলনায় এবার ফলন বেশি পাব বলে আশা করছি। প্রথম পর্যায় থেকে আমাদের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা লিচু বাগানীদের বিভিন্ন প্রকার পরামর্শ দিয়ে আসছেন, যাতে চাষিরা তাদের চাহিদা পূরণে সফল হয়। দিনাজপুর জেলায় এবার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর থেকে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।’