দুই যুগেও মীমাংসা হয়নি সালমান শাহ মৃত্যুর রহস্য
চিত্রনায়ক সালমান শাহ মৃত্যুর ঘটনাটি দুই যুগেও মীমাংসা হয়নি। সর্বশেষ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলাটিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এরপর গত ৩১ আগস্ট সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরীর আইনজীবী মোহাম্মদ ফারুক আহম্মেদ নারাজি দরখাস্তের জন্য সময়ের আবেদন করেন। আদালত আগামী ১১ অক্টোবর নারাজির জন্য দিন নির্ধারণ করেন।
এ বিষয়ে সালমান শাহের আইনজীবী মোহাম্মদ ফারুক আহম্মেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সালমান শাহ হত্যা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পিবিআই। কিন্তু আমরা তদন্ত প্রতিবেদন এখনো দেখার কোনো সুযোগ পাচ্ছি না। কীভাবে তদন্ত করল বা কী করল। তা না দেখে মামলার নারাজি লেখা সম্ভব না।’
ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন দেখতে না পারার কারণে আমরা এ বিষয়ে বিচারককে বলেছিলাম, কিন্তু তার পরও আমরা তদন্ত প্রতিবেদন দেখতে পাইনি। এ ছাড়া এ মামলায় যতটুকু শুনেছি তদন্ত কর্মকর্তা সঠিকভাবে প্রতিবেদন দেন নাই। কিছু অসঙ্গতি রয়েছে, সেগুলো যাচাই-বাচাই করে আমরা নারাজি দেব।’
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সিএমএম আদালতের ডেসপাস (আদানপ্রদান) শাখায় এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম।
এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ধানমণ্ডিতে সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইর প্রধান ও পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার বলেছিলেন, ‘সালমান শাহ রহস্যজনক মৃত্যুর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে—এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি তদন্তে। আমরা সালমানের স্ত্রী সামিরাসহ সন্দেহভাজনদের বক্তব্য নিয়েছি। সব মিলিয়ে এটিই প্রতীয়মাণ হয়েছে যে পারিবারিক কলহ ও মানসিক যন্ত্রণা সইতে না পারায় আত্মহত্যা করেন সালমান শাহ।’
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জনপ্রিয় চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ নিহত হন। সে সময় তাঁর বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছিলেন। ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই সালমানের বাবা তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে—এমন অভিযোগ এনে সিএমএম আদালতে একটি অভিযোগ করেন।
ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিএমএম আদালত অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যার অভিযোগটি একসঙ্গে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেন।
পরবর্তী সময়ে একই বছরের ৩ নভেম্বর সিআইডি ঘটনাটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে ঢাকার সিএমএম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করে সিআইডি। একই বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালত সিআইডির দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেন। সিআইডির দাখিল করা প্রতিবেদনে সালমানের বাবা সন্তুষ্ট না হয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করেন।
ওই রিভিশন মামলার ওপর শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি ফের বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। এরপর ১২ বছর ধরে এ মামলা বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।
২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সিএমএম হাকিম বিকাশ কুমার সাহার কাছে মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনেও সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
পরবর্তী সময়ে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সিএমএম আদালতে আরেকটি নারাজি দাখিল করেন। এর শুনানি শেষে বিচারক মামলাটি র্যাবকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা করেন। পরে ঢাকার বিশেষ জজ-৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েস রিভিশন মঞ্জুর করেন। এরপর ২০১৬ সালের শেষ দিকে পিবিআইকে নতুন করে তদন্তভার দেওয়া হয়।