‘দেশ অনেক ভালো আছে’, বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আহ্বান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
সরকার ঠিকমতো ও সঠিক সময়ে ‘পদক্ষেপ’ নেওয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো আছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ রোগের চিকিৎসায় প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে তিনি এ নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেওয়া উদ্যোগগুলো কাজে আসছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন ভালো আছি। আমরা চাই, সকলে মিলে নিয়মকানুন মেনে চললে আমরা ভালো থাকব, ভালো থাকতে চাই। পৃথিবীর সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে। কাজেই ভালোটা আমরা রাখতে চাই। সকলে মিলেই কাজ করছে। ইনশাআল্লাহ, এই করোনাভাইরাস থেকে দেশ ও মানুষ ভালো থাকবে।’
আজ রোববার সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব কথা বলেন।
অনলাইনে দেওয়া বক্তব্যে মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা গতকালকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। তাঁরা আমাদের কিছু গাইডলাইন দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আরো ১০টি দেশ ছিল। ইউএনও সন্তুষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে আমরা প্রতিদিন জানাই। তিনিও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।’
করোনাভাইরাসের চিকিৎসার প্রস্তুতি নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলা বিভিন্ন অভিযোগেরও জবাব দেন জাহিদ মালেক।
‘করোনাভাইরাস রোধে আমাদের প্রস্তুতি ছিল কি না—এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। আমি বলতে চাই, আমরা জানুয়ারি থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছি। ঢাকায় ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের সুরক্ষার জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা এটা জেনে খুশি হবেন, আমাদের হাতে আড়াইশ ভেন্টিলেটর চলে এসেছে। তা আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে হস্তান্তর করেছি। এবং আমাদের ইমপোর্টেও প্রায় সাড়ে ৩০০ ভেন্টিলেটর আছে। অনেক বড় বড় দেশেও এতগুলো ভেন্টিলেটর থাকে না। আমরা এর আগে প্রস্তুতি নিয়েছি বিধায় বাংলাদেশ ভালো আছে।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘এ পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে তিন লাখ পিপিই বিতরণ করা হয়েছে। আমাদের এ মুহূর্তে প্রায় ৫০০ ভেন্টিলেটর হাতে আছে। এ ছাড়া আরো সাড়ে ৪০০ আসবে, বর্তমানে আমাদের হাতে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার কিট আছে ৪৫ হাজার।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, আমাদের দেশে রোগীর সংখ্যা কম কেন? সংখ্যা বাড়লে কি আমরা খুশি হই? আমরা চাই কি বেশি বেশি লোক সংক্রমিত হোক আর বেশি বেশি লোক মৃত্যুবরণ করুন। আমরা চাই, দেশে লোক সংক্রমিত না হোক, লোক মারা না যাক। এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়।’
মন্ত্রণালয় যথেষ্ট কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে জাহিদ মালিক বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুধু চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে। বিমানে যাতায়াত চলবে কি না, তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়। ইউরোপ-আমেরিকার বায়ার অর্ডার ক্যানসেল করছে, এটিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেখার বিষয় নয়।’
বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘অনেক চ্যানেলে বলেছে, আমাদের মাত্র ২৯টি ভেন্টিলেটর আছে। এটা সঠিক নয়। কাজেই আমাদের হাতে কতগুলো ভেন্টিলেটর আছে, সেটা আপনাদের জানালাম। আজও প্রায় ৫০০ ভেন্টিলেটর আছে। আরো ২৫০টি ভেন্টিলেটর আসছে। বিশ্বের অনেক দেশেও এত ভেন্টিলেটর নেই।’
এ ছাড়া তেজগাঁওয়ে আকিজ গ্রুপের হাসপাতাল তৈরিতে স্থানীয়দের বাধা দেওয়ার প্রসঙ্গে গণমাধ্যমের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছে। কেউ ভবন দিচ্ছে, পিপিই দিচ্ছে, এতে আমরা আনন্দিত। আকিজ গ্রুপ ভবন তৈরি করে দিতে চায় এবং তাতে সমস্যা না হয়, সেটা দেশবাসীর জন্যই সুবিধা হবে। আমাদের প্রয়োজন না হলে ব্যবহার করব না। আমাদের অনেকগুলো হাসপাতাল চিহ্নিত করা আছে। এরপরও প্রয়োজন হলে সেখানে রাখা যাবে। আমাদের মনে হয়, জনগণের সহনশীল হওয়া উচিত।’
আজ দুপুরের এই ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১০৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এসব নমুনা পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে গত ২৪ ঘণ্টায় আমরা নতুন কোনো সংক্রামক শনাক্ত করিনি। তার মানে সর্বমোট নিশ্চিত রোগীর সংখ্যা ৪৮ জনই।’
গতকাল শনিবারও আইইডিসিআর তাদের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিল, তারা আগের ২৪ ঘণ্টায় কোনো আক্রান্ত পায়নি। এর ফলে গত ৪৮ ঘণ্টায় দেশে কোনো নতুন রোগী শনাক্ত হয়নি। আর এই সময়ে কেউ মারাও যায়নি।