নওগাঁয় আ.লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারণায় বাধা ও হামলার অভিযোগ
নওগাঁ সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে হুমকি ও প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল মজিদ। আজ শনিবার দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিলকপুর ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মজিদ জানান, তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত বুধবার চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পর থেকে তিনি প্রচারণা শুরু করেন। কিন্তু প্রচারণা শুরুর পর থেকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল করিম সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আনারস প্রতীকের পোস্টার, ব্যানার ছিঁড়ছে ও অফিস ভাঙচুর করছে। এছাড়া তাঁর কর্মী, সমর্থকদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর এসব কর্মকাণ্ড নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল হওয়ায় এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
এদিকে, একই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিলকপুর ইউপির দুই নম্বর ওয়ার্ড নির্বাচনে ইউপি সদস্য প্রার্থী ইয়াসিন আলী নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলে জানান, তিনি টিউবওয়েল মার্কা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে তিনি তাঁর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করে ধোপাইকুড়ি গ্রামে তাঁর বাড়িতে ফিরেন। এ সময় চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম ৩০-৩৫ জন সন্ত্রাসী নিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালায়। খবর পেয়ে ওই রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ওই দিন অন্তত তিনশ থেকে চারশ স্থানীয় বাসিন্দা তাঁর অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে পুলিশের কাছে সাক্ষ্য দেন। গতকাল শুক্রবার এ ঘটনায় থানায় ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাননি তিনি।
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল মজিদ ও ইউপি সদস্য প্রার্থী ইয়াসিন আলী বিএনপির সমর্থক হিসেবে পরিচিত। সংবাদ সম্মলনে অন্যদের মধ্যে সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নূর-ই আলম, তিলকপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ওবাইদুর রহমান ছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী রেজাউল করিম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনারস প্রতীকের ব্যানার-পোস্টার ও অফিস ভাঙচুর এবং ইউপি সদস্য ইয়াসিন আলীর বিরুদ্ধে হামলার যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আনারস প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল মজিদ ও ইউপি সদস্য প্রার্থী বিএনপির রাজনীতি করে। এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ ও আমার সুনাম ক্ষুণ্ণ করাই তাঁদের উদ্দেশ্য। আমার জনপ্রিয়তা দেখে নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত ভেবে তাঁরা এ ধরণের অভিযোগ করছে।’
এ বিষয়ে তিলকপুর ইউপি নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘তিলকপুর ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীকের প্রার্থী ও দুই নম্বর ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য পদে টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী পৃথক দুটি অভিযোগ করেছেন। তাঁরা তিলকপুর ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন, অফিস ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করতে নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। নির্বাচনকে ঘিরে ফৌজদারী অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে তিলকপুর ইউপিসহ নওগাঁর সদর ও রাণীনগর উপজেলার ২০টি ইউপিতে ১১ নভেম্বর ভোট অনুষ্ঠিত হবে। তিলকপুর ইউপি নির্বাচনে রেজাউল করিম ও আব্দুল মজিদ ছাড়াও ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নুরুজ্জামান ও বাংলাদেশ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী হাতপাখা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।