নোয়াখালীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ছাত্রলীগকর্মী রাকিব হত্যা মামলার আসামি নিহত
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় গতকাল সোমবার রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ছাত্রলীগকর্মী রাকিব হোসেন (২৫) হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি নজরুল ইসলাম (২৫) নিহত হয়েছে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে একটি পিস্তল, কয়েকটি গুলি ও একটি ধামা উদ্ধার করা হয়েছে।
গত রোববার রাতে বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুর ইউনিয়নে ইসলামী ছাত্রশিবিরের হামলায় গুলিবিদ্ধ হন রাকিব। পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাকিবের মৃত্যু হয়।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ জানান, রাকিব হত্যা মামলার আসামি ও পিয়াস বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড আবদুল হাকিমের ছেলে নজরুল ইসলাম একজন সন্ত্রাসী। তিনি এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও গুমসহ একাধিক মামলা রয়েছে। গতকাল তাকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আরো অস্ত্র উদ্ধারে রাতে জয়রাম নারায়ণপুর জনকল্যাণ মাঠে গেলে পিয়াস বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলি হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে নজরুল মারা যায়। বর্তমানে লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, কয়েকটি গুলি ও একটি ধামা উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে রাকিব ও খুলনার কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাদীউজ্জামান রাসেলের হত্যার প্রতিবাদে গতকাল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে তারা। রাত ১১টার দিকে ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে কলাভবন, ভিসি চত্বর, রোকেয়া হলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।
বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ‘শিবিরের চামড়া, তুলে নেব আমরা’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় রাজাকারের ঠাঁই নাই’, ‘আমার ভাই মরল কেন, জবাব চাই, জবাব চাই’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন, শিবিরের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন হল ইউনিটের প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে যখন রাজনীতির সুষ্ঠু পরিবেশ বিদ্যমান, দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে যখন অগ্রগতি তখন জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা আবার হঠাৎ করে মাথাচাড়া দিতে চাচ্ছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীরা মাঠে থাকে বলে জামায়াত-শিবির ঘরে থাকে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দিনরাত পরিশ্রম করে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি রুখে দাঁড়ানোর জন্য।’
আল-নাহিয়ান খান জয় আরো বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যখন উন্নয়নের কথা বলছে তখন পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে, আমার ভাই রাকিব আর রাসেলের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। ছাত্রলীগ বসে থাকবে না, দুর্বার আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’ এ সময় আজ নেতাকর্মীদের দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন তিনি।
বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশে ছাত্রশিবিরের কোনো স্থান হবে না। আমাদের শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতে আমরা জঙ্গিবাদের উত্থান হতে দেব না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, ‘মুজিবের রক্তের আদর্শ নিয়ে আমরা রাজনীতি করি। যুদ্ধ যদি করতে হয় আমরা যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত। আপনারা কেউ আশাহত হবেন না। এই যুদ্ধের প্রথম মানুষটি আমি হতে চাই। মুজিব আর্দশের সৈনিক হিসেবে রক্তের প্রতিশোধ রক্ত দিয়েই নিতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা যখন ব্রিটিশদের উপনিবেশবাদ বিরোধী আন্দোলন করেছি তখনও জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে। যখন ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ অর্জন করেছি সেদিনও জামায়াত-শিবির স্বাধীনতাবিরোধী হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করেছে।’ এ সময় তিনি সাংবিধানিকভাবে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ চান।
এ ছাড়া, দুই নেতাকর্মী হত্যার ঘটনায় সারা দেশে ছাত্রলীগের সব ইউনিট আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় স্ব-স্ব ইউনিটে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল পালন করবে।
গত রোববার বেগমগঞ্জ উপজেলার আমানউল্লাহপুর ইউনিয়নের পলোয়ান বাজারে রাত আনুমানিক ৮টার দিকে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা ছাত্রলীগের কর্মীদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায় ও কুপিয়ে আহত করে। হামলায় আহত ছাত্রলীগ কর্মী রাকিব গতকাল সোমবার মারা যান এবং অপর এক আহত ছাত্রলীগ কর্মী রায়হানের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধসহ আরো তিনজন আহত হয়েছেন। আহত ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন হাবিব, রনি ও মনু। অপরদিকে একইদিনে খুলনার কয়রায় ছাত্রলীগের উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাদিউজ্জামানের ওপর আরেক হামলা হয়। এতে হাদীউজ্জামান রাসেলসহ ছাত্রলীগ কর্মী ইয়াছিন আরাফাত, রাজু, আব্দুল্লাহ, আবুল হাসান ও সেলিম আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গুরুতর আহত উপজেলা রাসেলকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর পথে সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় মৃত্যু হয়।