নৌপ্রধানের গ্রীষ্মকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন
নৌবাহিনীর মিডশিপম্যান ২০১৯ বি ব্যাচ এবং ডিরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ২০২২ এ-ব্যাচের গ্রীষ্মকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের নেভাল একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল প্রধান অতিথি হিসেবে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। এরমধ্য দিয়ে নৌবাহিনীর ২০১৯ বি-ব্যাচের ৬২ জন মিডশিপম্যান এবং ২০২২ এ-ব্যাচের ছয়জন ডিরেক্ট এন্ট্রি অফিসারসহ মোট ৬৮ জন নবীন কর্মকর্তা কমিশন লাভ করেন।
এদের মধ্যে আটজন নারী, দুজন মালদ্বীপ ও একজন প্যালেস্টাইনের মিডশিপম্যান আছেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জনকারীদের হাতে পদক তুলে দেন। কমিশনপ্রাপ্ত নবীন কর্মকর্তাদের মধ্যে মিডশিপম্যান ২০১৯ বি-ব্যাচ হতে মিডশিপম্যান মো. আশরাফুর রহমান, (জ), বিএন সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী সেরা চৌকস মিডশিপম্যান হিসেবে ‘সোর্ড অব অনার’ অর্জন করেন। মিডশিপম্যান এইচ এম ইফাজ রহমান, (ই), বিএন প্রশিক্ষণে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী হিসেবে ‘নৌপ্রধান স্বর্ণপদক’ লাভ করেন।
এ ছাড়াও ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ২০২২ এ ব্যাচের অ্যাডজুডেন্ট সাব লেফটেন্যান্ট কাজী মো. ইখতিয়ার রেজা রিয়ন, (ই), বিএন শ্রেষ্ঠ ফলাফল অর্জনকারী হিসেবে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক’ লাভ করেন।
পরে নবীন কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন এবং তাঁদের র্যাঙ্ক পরিয়ে দেওয়া হয়।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে নৌবাহিনী প্রধান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী বীর নৌসেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
নৌবাহিনী প্রধান বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অসামান্য প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ও দিক নির্দেশনায় নৌবাহিনী আজ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি আধুনিক ও ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে সুপরিচিত। নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে ইতোমধ্যে নৌবহরে সাবমেরিনসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আধুনিক যুদ্ধজাহাজ, হেলিকপ্টার, মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ারক্রাফটসহ আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সংযোজিত হয়েছে এবং সম্প্রতি নতুন ছয়টি যুদ্ধজাহাজ নৌবহরে কমিশনিং করা হয়েছে। সেইসাথে ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে হেলিকপ্টার, উন্নততর জাহাজ এবং আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সংযোজনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণাধীন ঘাঁটিসমূহের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।’
পদ্মা সেতু উদ্বোধন প্রসঙ্গে নৌপ্রধান বলেন, ‘বহুল কাঙ্খিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলসহ সমুদ্র বন্দরসমূহের কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে।’ সেইসঙ্গে এসংক্রান্ত নিরাপত্তা বজায় রাখার মাধ্যমে, দেশীয় অর্থনীতির গতিশীলতা নিশ্চিতকরণে নৌবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে আরও দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহবান জানান নৌপ্রধান।
বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে নবীন কর্মকর্তারা তাঁদের মনোবল অক্ষুণ্ন রেখে যে উন্নত প্রশিক্ষণ ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন, নৌপ্রধান তার ভূঁয়সী প্রশংসা করেন। একইসঙ্গে কঠোর এ প্রশিক্ষণ প্রদানে যেসকল কর্মকর্তা, প্রশিক্ষক ও নৌসদস্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তাঁদের প্রতিও আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
নৌপ্রধান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আজকের নবীন কর্মকর্তারা নেভাল একাডেমি থেকে অর্জিত জ্ঞান যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরকে যোগ্য কর্মকর্তা হিসেবে গড়ে তুলবেন এবং ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে এই প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও অগ্রগতির পথে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন।’
পেশা হিসেবে দেশ সেবার এ পবিত্র দায়িত্বকে বেছে নেওয়ায় নবীন কর্মকর্তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান নৌপ্রধান। সেইসঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর গর্বিত সদস্য হিসেবে দেশপ্রেম ও শৃঙ্খলাবোধকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান।
নৌপ্রধান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে নবীন কর্মকর্তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করার পরামর্শ দেন।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বেসামরিক কর্মকর্তা ও সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত নবীন কর্মকর্তাদের অভিভাবকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।