পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় ভোগান্তিতে রোগীরা
কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম মাত্র ২৭ জন চিকিৎসক দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। এমনটাই জানিয়েছেন হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ও উপপরিচালক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন।
উপপরিচালক বলেন, ‘পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকার কারণে কার্ডিয়াক, নাক, কান ও গলা, চর্ম ও যৌন এবং ডেন্টালের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া যেসব বিভাগে চিকিৎসক আছেন, সেসব বিভাগে প্রয়োজনের চেয়ে কনসালটেন্ট ও বিশেষজ্ঞসহ কম চিকিৎসক রয়েছেন। এ কারণে হাসপাতালে ভর্তি চার শতাধিক রোগী ও প্রতিদিন বহির্বিভাগে আসা দেড় থেকে দুই হাজার রোগীর চিকিৎসাসেবা সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসক না থাকার কারণে অব্যবহৃত চিকিৎসা সরঞ্জামাদিও নষ্ট হচ্ছে।’
উপপরিচালক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন আরো বলেন, ‘চিকিৎসক শূন্যতা ছাড়াও প্যাথলজি ও বিভিন্ন বিভাগে মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ প্রয়োজনীয় লোকবল সংকটের কারণে প্রতিদিনই অনেক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা ও অব্যবস্থাপনার কারণেও হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’
‘চিকিৎসক সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে হৃদযন্ত্রের সমস্যাজনিত কার্ডিয়াক রোগীরা। কোনো চিকিৎসক না থাকায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ২০ শয্যা বিশিষ্ট কার্ডিয়াক বিভাগ বা সিসিইউ ১০ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এর ফলে কার্ডিয়াক রোগীরা ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছে অথবা বাধ্য হয়ে অন্য কোনো বেসরকারি হাসপাতালে চলে যাচ্ছে।’-যোগ করেন হাসপাতালের উপপরিচালক।
সিপিবি কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল হক জানান, ‘আমার কার্ডিয়াক সমস্যা হওয়ায় আমি ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আসি। চিকিৎসকরা আমাকে হাসাপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু এই হাসপাতালের সিসিইউ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় এবং অন্য কোনো হাসপাতালে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানেই সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেই। শুধু আমি নই, সিসিইউ বন্ধ থাকায় অনেক রোগী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে।’
স্থানীয় একটি কলেজের প্রভাষক রিয়াদ রেজা বলেন, ‘আমার স্ট্রোক করায় ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু সিসিইউ বন্ধ থাকায় প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাতে বাধ্য হই।’
সদর উপজেলার পাবইকান্দি গ্রামের সরলা খাতুন বলেন, ‘চর্ম রোগের ডাক্তার দেখাতে তিনদিন এসে হাসপাতাল থেকে ফিরে গেছি। ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা পাচ্ছি না।’
মহিষাকান্দি গ্রামের যুবক আনার মিয়া বলেন, ‘দাঁতের ডাক্তার দেখাতে কয়েকদিন এসে ফিরে গেছি। ডাক্তার কবে আসবে, এ ব্যাপারে জিজ্ঞাস করে কোথাও সঠিক উত্তর পাইনি।’
চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটিতে একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সেটি ১৭ থেকে ১৮ বছরের পুরাতন হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এ কারণে এটি রাস্তায় যখন-তখন বিকল হয়ে পড়ে। এ কারণে মুমূর্ষু রোগী নিয়ে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, ‘এর ফলে ভোগান্তিতে পড়ছে রোগী ও তাদের স্বজনরা। এ ছাড়া একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স থাকায় সেটি রোগী নিয়ে চলে গেলে বিপাকে পড়েন অন্য মুমূর্ষু রোগীরা। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই অপেক্ষা করতে হয়।’
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও উপপরিচালক ডা. মো. হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিরাজমান সমস্যাগুলির সমাধানের ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস পাওয়া গেছে।’