পশুর হাটে মাস্ক নেই ২১ শতাংশের, থুতনির নিচে ২৬ শতাংশ
রাজধানীর গাবতলীর পশুর হাটে মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হচ্ছে, ‘আপনারা কেউ মাস্ক ছাড়া হাটের ভেতরে ঢুকবেন না। জ্বর-কাশি থাকলে হাটের ত্রিসীমানায় পা দেবেন না।’
মাইকে যখন সচেতনতামূলক প্রচারণা চলছে তখন হাটের ভেতরে ৫০০ জনের মুখ গুণে দেখা গেছে, অন্তত ১০৭ জনের মুখে মাস্কই ছিল না।
মাস্ক সঙ্গে থাকা বাকি ৩৯৩ জনের মধ্যে ১৩১ জনের মাস্ক তাঁর মুখের থুতনির নিচে রাখা ছিল। বাকি ২৬২ জনের মধ্যে কারো কারো হাতে মাস্ক থাকলেও বেশিরভাগের মুখেও মাস্ক পরা ছিল।
আজ রোববার বিকেলে গাবতলীর পশুর হাটে সরেজমিনে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়।
মাস্ক না থাকা ১০৭ জনের বেশিরভাগই পশু বিক্রেতা। তবে কয়েকজন দর্শনার্থীকে দেখা গেছে, যারা মাস্ক ছাড়া ঘোরাঘুরি করছিল।
এ ছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে। কিন্তু হাটের ভেতরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো হদিস মেলেনি।
গাবতলী গবাদি পশুর হাট পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে মাস্ক পরতে বারবার মাইকিং করা হচ্ছিল। কিন্তু হাটে থাকা অন্তত অর্ধেক মানুষ মানেনি সেই নির্দেশনা। কেন মাস্ক পরেননি-এমন প্রশ্নে অন্তত এক ডজন গরু ব্যবসায়ী এই প্রতিবেদককে জানান, তাঁরা হাটেই থাকছেন বেশিরভগ সময়। কোনো কোনো ব্যবসায়ী গরুর পাশেই শুয়ে থাকছেন। হাটের ভেতরে প্রচুর গরম। মাস্ক পরে থাকতে কষ্ট হয় তাদের।
তবে ব্যবসায়ীদের ভেতরে মাস্ক পরে থাকা নাদিম নামের একজন বলেছেন, ‘যাঁরা মাস্ক পরছেন না তাঁদের দ্বারা অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। সেজন্য এখনি হাটের পরিচালনা কমিটি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত। না হলে এই হাটেই অনেকে আক্রান্ত হবেন।’
মাস্ক না পরে থাকা কুষ্টিয়া থেকে আসা ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান বলেন, ‘এই লোকজনের ভিড়ে মাস্ক পরে থেকে লাভ কী? গায়ের সঙ্গে গা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সবাই। এখানের পরিবেশটা করোনার জন্য ভয়ংকর। কিন্তু কিছু তো করার নেই। গরু নিয়ে এসেছি। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছে।’
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ফয়জুল্লাহ আহমেদ। তিনি এসেছেন গরু কিনতে। হাটের পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘হাটের যে অবস্থা, আগে জানলে আসতাম না। সরকার বলছে হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে সবাই। কিন্তু এসে দেখলাম পুরো বিপরীত।’
কেউ কি আপনাদের কথা শুনছে না-এমন প্রশ্নে হাটের পরিচালনা কমিটির সদস্য সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি এখনি দেখছি বিষয়টি। সবাইকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে যা যা করার তাই করব।’
এই ব্যাপারে দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, ‘মনে করেন হাটে মানুষ ঢোকে ১০ হাজার, আর আমাদের লোক (পুলিশ) থাকে মাত্র ১০ জন। যতজনকে বলার সুযোগ থাকে আমরা ততজনকে বলছি, যাতে মাস্ক ছাড়া কেউ হাটে না ঢোকে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলানোর জন্য আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
করোনার সংক্রমণ রোধে গঠিত ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’র সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভাইরোলজিস্ট) অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মাস্ক নিয়ে যে পরিসংখ্যান আপনি জানালেন, পরিস্থিতি তেমন হলে এটা করোনার ভয়াবহতাকে আরো বাড়াতে সহযোগিতা করবে।’