পাকুন্দিয়ায় আ. লীগের আহ্বায়কের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বিক্ষোভ
চলমান বিধিনিষেধের মধ্যেই কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় যুদ্ধাপরাধী অভিযোগে আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে পাকুন্দিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে তাদের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়।
কর্মসূচিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের নবঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিনকে একজন যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামি উল্লেখ করে উক্ত কমিটি বাতিলের দাবি করা হয়।
এর আগে পাকুন্দিয়ায় একই দাবিতে গত ২৩ ও ২৪ জুলাই বিক্ষোভ-মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন এবং সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিধিনিষেধের মধ্যে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী কয়েকশ নেতাকর্মীকে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করতে দেখা গেছে। মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্বসহ নিশ্চিতসহ স্বাস্থ্যবিধি পালন নিয়ে নেতাকর্মীদের তোয়াক্কা করতে দেখা যায়নি। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ কে এম লুৎফুর রহমান পুলিশ নিয়ে সমাবেশস্থলে যান এবং সমাবেশ বন্ধ করতে বলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সমাবেশ শেষ হয়।
এ কে এম লুৎফুর রহমান বলেন, ‘আমাদের না জানিয়ে এবং কোনো অনুমতি ছাড়াই তারা এ কর্মসূচি পালন করেছে। আমরা খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে সমাবেশ বন্ধ করতে বলি। ভবিষ্যতে আর এ রকম না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’
পাকুন্দিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজবাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে আধা ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচি চলে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্মআহ্বায়ক মোতায়েম হোসেন স্বপন, জেলা শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ, নারান্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, বুরুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা রুবেল, জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার শামীম আহম্মদ, হোসেন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান আকন্দ, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন, উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি নাজমুল হক দেওয়ান এবং উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি বাবুল আহমেদ।
সমাবেশে বক্তারা নবঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিনকে যুদ্ধাপরাধী এবং মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলার আসামি দাবি করে অবিলম্বে এই কমিটি বাতিল করার আহ্বান জানানো হয়। তা না হলে আর কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।
উল্লেখ্য, ঈদের পরের দিন গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে এক সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্মআহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রেনু এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং সভাস্থল ত্যাগ করে বের হয়ে যান।
এর আগে সর্বশেষ ২০০০ সালের ১৮ আগস্ট অ্যাডভোকেট আ.ফ.ম ওবায়দুল্লাহকে আহ্বায়ক করে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু ও মোতায়েম হোসেন স্বপন। ২০২০ সালে আহ্বায়কের পদ থেকে অ্যাডভোকেট আ ম ওবায়দুল্লাহ পদত্যাগ করার পর থেকে প্রায় এক বছর ধরে আহ্বায়ক ছাড়াই চলে আসছিল।
কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনের স্থানীয় সাংসদ সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ নতুন আহ্বায়ক কমিটির বিরোধীতা করে বলেছেন, ‘সোহরাব উদ্দিনকে আহ্বায়ক হিসেবে পাকুন্দিয়া আওয়ামী লীগের কেউ মেনে নিবে না।’
তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল জানিয়েছেন, ‘সব নিয়ম মেনে বিধিসম্মতভাবেই কমিটি গঠিত হয়েছে। দীর্ঘদিনের শূন্যতা কাটিয়ে সংগঠনকে গতিশীল করতেই সর্বসম্মতভাবে সোহরাব উদ্দিনকে যোগ্য মনে হয়েছে।’