পাপিয়ার অস্ত্র ও মাদক মামলা তদন্ত করবে র্যাব
নরসিংদীর আলোচিত যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউয়ের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অস্ত্র ও মাদক আইনের দুই মামলা তদন্ত করার জন্য র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে র্যাব ১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফি উল্লাহ বুলবুল এনটিভি অনলাইনকে এই তথ্য জানিয়েছেন। র্যাবই পাপিয়া, তাঁর স্বামীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছিল।
শাফি উল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘পাপিয়ার বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানার দায়ের হওয়া জাল নোটের মামলটি ছাড়া শেরে বাংলানগর থানার দায়ের হওয়া মাদক ও অস্ত্র মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে র্যাবকে। আর জাল নোটের মামলাটি তদন্ত করবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।’
আজ বা আগামীকাল গোয়েন্দা পুলিশের হাতে থাকা পাপিয়ার রিমান্ড শেষ হচ্ছে বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী সপ্তাহে আদালতের কাছে পাপিয়ার বিরুদ্ধে ১০ দিনের ফ্রেশ রিমান্ড আবেদন করব। র্যাব মনে করে, সব বিষয় বের করে আনার জন্য তাঁকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।'
গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে নয়াদিল্লি যাওয়ার সময় বহির্গমন গেট থেকে পাপিয়া (২৮), তাঁর স্বামী মফিজুর রহমান (৩৮), মফিজুরের ব্যক্তিগত সহকারী সাব্বির খন্দকার (২৯) ও পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তায়্যিবাকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে তাদের বিরুদ্ধে জাল টাকা, অস্ত্র ও মাদকের মামলা হয়। এসব মামলায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডও মঞ্জুর করেন আদালত। তবে এর মধ্যেই রাজনীতিবিদ, আমলাসহ সমাজের বেশকিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম পাপিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়। যদিও এসব নামের সত্যাসত্য কেউ নিরূপণ করেনি।
কে এই পাপিয়া
নরসিংদী জেলা শহরের ভাগদী মারকাজ মসজিদ এলাকার বাসিন্দা পেট্রোবাংলার অবসরপ্রাপ্ত গাড়িচালক সাইফুল বারীর মেয়ে পাপিয়া। ২০০৯ সালে নরসিংদী সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। এরপর ২০১২ সালে স্নাতকে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে স্নাতক শেষ করতে পারেননি তিনি।
পাপিয়ার ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে নানা ধরনের কথা শোনা যায় সেই সময়ের ছাত্রনেতাদের কাছে। কারো বক্তব্য, পাপিয়া ছাত্র রাজনীতিতে কখনোই সক্রিয় ছিলেন না। আবার কারো বক্তব্য, কলেজজীবন থেকেই পাপিয়া উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত।
যুব মহিলা লীগে পদ পাওয়ার আগেই পাপিয়া বিয়ে করেন নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমনকে। পাপিয়ার সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়ে তিনিও এখন পুলিশ রিমান্ডে আছেন।
পাপিয়াকে নিয়ে র্যাবের বক্তব্য
পাপিয়াকে গ্রেপ্তারের দিন সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব ১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল জানান, হোটেল ওয়েস্টিনের ২১তলার প্রেসিডেন্ট কক্ষটি গত নভেম্বরে ভাড়া নেন পাপিয়া। তিনি গত তিন মাসে ওই কক্ষের ভাড়া পরিশোধ করেছেন প্রায় ৮৮ লাখ টাকা। ১৯তলায় একটি বার রয়েছে, যেটি তিনি পুরোটাই বুক করে নিতেন। সেখানে প্রতিদিন তিনি আড়াই লাখ টাকা মদের বিল পরিশোধ করতেন। সব মিলিয়ে দেখা যায়, গত তিন মাসে তিনি প্রায় তিন কোটি টাকা বিল পরিশোধ করেছেন হোটেল কর্তৃপক্ষকে।