পাবনায় অস্ত্রোপচারে প্রসূতির মৃত্যু, কথিত চিকিৎসক আটক
পাবনার চাটমোহরে অস্ত্রোপচারের পর সেলাই না করেই রোগীকে ফেলে পালানোর সময় সাদ্দাম হোসেন নীরব নামের এক কথিত সার্জন ও তাঁর এক সহকারীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পৌর শহরের নারিকেলপাড়া মহল্লার ‘চাটমোহর ইসলামিক হাসপাতাল’ নামের একটি ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে সংকটাপন্ন অবস্থায় প্রসূতি তাছলিমা খাতুনকে পাবনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাছলিমার বাড়ি উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের বোঁথড় গ্রামে।
আটক কথিত সার্জন সাদ্দাম হোসেন পাশের নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা। তবে ক্লিনিক মালিক আমির হোসেন বাবলু পালিয়ে গেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও রোগীর স্বজনরা জানায়, গতকাল সোমবার তাছলিমা খাতুনের প্রসবব্যথা উঠলে স্বজনরা তাঁকে পৌর শহরের নারিকেলপাড়া ‘চাটমোহর ইসলামিক হাসপাতাল’ নামের ওই ক্লিনিকে ভর্তি করে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে কথিত সার্জন সাদ্দাম হোসেন নীরব, ক্লিনিক মালিক আমির হোসেন বাবলু, সার্জনের সহকারী আসাদুজ্জামান ও দুজন সেবিকা মিলে অস্ত্রোপচার করেন এবং একটি কন্যা সন্তান ভূমিষ্ট হয়। এ সময় রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলে অবস্থা বেগতিক দেখে কথিত সার্জন, তাঁর সহকারী ও ক্লিনিক মালিক পালানোর চেষ্টা করেন। সার্জনকে আটক করা গেলেও পালিয়ে যান ক্লিনিক মালিক আমির হোসেন বাবলু। পরে সার্জনের সহকারী আসাদুজ্জামানকেও আটক করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অস্ত্রোপচারের সময় অপারেশন থিয়েটারজুড়ে রক্ত ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পর রোগীর স্বজন এবং স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে উঠলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। পরে তাছলিমা খাতুনকে সংকটাপন্ন অবস্থায় পাবনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ওই প্রসূতি মাকে মৃত ঘোষণা করেন। নবজাতক মেয়েটি সুস্থ আছে, তাকে পাবনা সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. বায়েজীদ-উল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে ওই ক্লিনিকে গিয়েছিলাম। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলে রোগীকে সেলাই না করেই সবাই পালায়। পরে সংকটাপন্ন অবস্থায় তাঁকে (তাছলিমা) পাবনা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেখ নাসীর উদ্দিন জানান, সাদ্দাম হোসেন ও তাঁর সহকারী আসাদুজ্জামানকে আটক করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এ বছরের ৩ জুলাই ক্লিনিকটিতে অবেদনবিদ চিকিৎসক ছাড়া রোগীর অস্ত্রোপচার এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসার কারণে কথিত সার্জন ও ক্লিনিক মালিককে জরিমানা করে ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইফতেখারুল ইসলাম। সে সময় কথিত সার্জন সাদ্দাম হোসেন চিকিৎসক সনদ দেখাতে না পারলেও পরে সিলগালা ভেঙে আবারও তাঁকে নিয়ে ওই ক্লিনিকে অপারেশন শুরু করেন ক্লিনিক মালিক আমির হোসন বাবলু।