পাবনায় মডেল মসজিদ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/04/28/pabna-model-moshzid-oniom-pic-3.jpg)
পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা চত্বরে মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মসজিদ নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বারবার জানানো হলেও তারা কারও কথার কোনো তোয়াক্কাই করছে না।
এ নিয়ে সচেতন সমাজ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে প্রতিটি জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ে একটি করে একই ডিজাইনের মডেল মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার। প্রধানমন্ত্রীর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এটি। সারা দেশের মতো পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে ১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। কিন্তু নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে নানারকম অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। মসজিদ নির্মাণে স্টিলের শাটার ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও নিম্নমানের বাঁশ ও কাঠের শাটার ব্যবহার করা হচ্ছে। ঢালাই কাজে মোটা ডোমার বালু ২.২-এর পরিবর্তে ০.৭৫-এর লোকাল বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। ঢালাই কাজে নিম্নমানের পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। ইটের গাঁথুনিতে প্রথম শ্রেণির ইটের পরিবর্তে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে গ্রেড বিমের তলায় শাটার না দিয়ে মাটির ওপর ঢালাই করা হচ্ছে। এমন নানা অনিয়ম দেখা যাচ্ছে আটঘরিয়া মডেল মসজিদ নির্মাণে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিষয়টি ঠিকাদারকে জানানো হলেও তিনি কর্ণপাত করছেন না।
অনিয়মের বিষয়টি জানার পর গত ১১ এপ্রিল নির্মাণকাজ পরিদর্শন করে এমন অনিয়ম দেখতে পান আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম। তিনি ঠিকাদারকে কাজের শিডিউল দিতে বললেও দেননি। তিনি মৌকিখভাবে ঠিকাদারকে কয়েকবার বলার পরও নিয়মানুযায়ী কাজ করছেন না। পরে বাধ্য হয়ে তিনি গত ১২ এপ্রিল জেলা প্রশাসক বরাবর নিম্নমানের কাজের বিষয়ে চিঠি দেন। সেখানে তিনি ত্রুটি সংশোধন করে ডিজাইন, ড্রয়িং ও স্টেসিফিকেশন মোতাবেক মালামাল ব্যবহার করে কাজটি বাস্তবায়নের অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম বলেন, ‘মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। সেই প্রকল্প নিয়ে কোনো অনিয়ম, অবহেলা মেনে নেওয়া যায় না। আমি কয়েকবার ঠিকাদারকে মৌখিকভাবে বললেও তিনি আমাকে কাজের শিডিউল দেননি বা নিময়মাফিক কাজ করছেন না। কাজের মধ্যে বেশকিছু অনিয়ম আমি দেখেছি। ঠিকাদার আমার কথা না শোনায় আমি জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানিয়েছি। আমরা চাই মডেল মসজিদটি সঠিকভাবে মান ঠিক রেখে কাজ করা হোক।’
আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. ফুয়ারা খাতুন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়েছে। ঠিকাদারের কাছে কাজের শিডিউল চেয়েছি। সেটি পাওয়ার পর এ বিষয়ে টেকনিক্যাল একজনকে নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখে জেলা প্রশাসককে জানাব আমরা। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেবেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মোকছেদুল আলম নয়ন বলেন, ‘নিম্নমানের অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা শিডিউল মোতাবেক কাজ করছি। বাঁশ ও কাঠের শাটার দিয়েছি ঠিক আছে। এখনও মূল স্ট্রাকচারের কাজ শুরু হয়নি। তখন স্টিলের শাটার ব্যবহার করা হবে। বালু খোয়া বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে পরীক্ষা করে নেওয়া হয়েছে। আর অভিযোগের বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পাবনার গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমকে মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।