প্রতিপক্ষকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে ফাঁসলেন ব্যবসায়ীসহ দুজন
ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিপক্ষকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেরাই ফাঁসলেন ডিবি পুলিশের জালে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে গতকাল রোববার (৯ এপ্রিল) পঞ্চগড় সদর উপজেলায়।
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ঢেঁড়সের বীজের ভেতরে ইয়াবা দেওয়া হয়েছিল। ইয়াবা বেচাকেনার কথা বলে ডিবি পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়েছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ টমেটো চাষি ও ব্যবসায়ী মাসুদ রানা (৩৮) ও তাঁর ব্যবসায়িক পার্টনার চাঁদপুর জেলার টমেটো ব্যবসায়ী খোরশেদ আলমকে আটক করে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে চার প্যাকেট ঢেঁড়সের বীজ ও ৯৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। পরে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি পুলিশ নিশ্চিত হয় তাঁদের ফাঁসাতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
এরপর ডিবি পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তদন্তে নামে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাসুদ রানার প্রতিপক্ষকে আটক করতে সক্ষম হয়।
এ ঘটনায় টমেটো ব্যবসায়ী মাসুদকে কল করা নম্বর ও তথ্যদাতার নম্বর ট্রেকিং করে ডিবি পুলিশ নিশ্চিত হয় ষড়যন্ত্র করে মাসুদকে ফাঁসাতে চেয়েছিলেন তথ্যদাতা। পরে রাতেই ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে জেলার সদর উপজেলার কামাতকাজলদীঘি ইউনিয়নের ফুলপাড়া এলাকার মামুনুর রশিদ মামুন ও পঞ্চগড় পৌরসভার রামেরডাংগা এলাকার তুষার আলম প্রধানকে আটক করে। এ সময় অভিযানের খবর টের পেয়ে তাদের সহযোগী পঞ্চগড় পৌরসভার পুরাতন ক্যাম্প এলাকার মো. রায়হান পালিয়ে যান।
গতকাল রাতেই পঞ্চগড় সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) লিপন কুমার বসাক। গ্রপ্তারকৃতদের আজ সোমবার (১০ এপ্রিল) আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে ডিবি পুলিশ।
ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন জানান, পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাতকাজলদীঘি ইউনিয়নের ফুলপাড়া এলাকার টমেটো চাষি ও ব্যবসায়ী মাসুদ রানার (৩৮) সঙ্গে একই এলাকার টমেটো ব্যবসায়ী মামুনুর রশিদ মামুনের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ছিল। গত শনিবার (৮ এপ্রিল) মামুন তাঁর সহযোগী রায়হানের মুঠোফোন থেকে মাসুদকে কল করে ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের মেসার্স রশিদ বীজ ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী পরিচয় দিয়ে তাঁর টমেটোক্ষেতে সাথী ফসল হিসেবে ঢেঁড়স চাষাবাদ করতে পারমর্শ দেন। পরামর্শ মোতাবেক মামুন মাসুদকে গতকাল দুপুরে বাসযোগে বাসের হেলপার জহিরুল ইসলামের মাধ্যমে ঢেঁড়স বীজ পাঠানোর কথা জানান। পরে হেলপার জহিরুল ইসলাম গতকাল বিকেলে মাসুদকে মুঠোফোনে কল করে বীজগুলো গ্রহণ করার অনুরোধ করেন। পরে ব্যাংকে ব্যক্তিগত কাজ শেষে মাসুদ তাঁর ব্যবসায়িক পার্টনার চাঁদপুর জেলার টমেটো ব্যবসায়ী খোরশেদ আলমকে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চগড় পৌরসভার ধাক্কামারা এলাকায় ঢেঁড়স বীজ আনতে যান।
এদিকে মামুনের সহযোগী তুষার ডিবি পুলিশকে ফোন করে জানান, ধাক্কামারা এলাকায় প্রকাশ্যে ইয়াবার বেচাকেনা চলছে। খবর পেয়ে ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চার প্যাকেট ঢেঁড়স বীজ ও একটি প্যাকেটের ভেতর ৯৫ পিছ ইয়াবা উদ্ধার করে জব্দ করেন। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১৯ হাজার টাকা বলে জানায় ডিবি পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘আমরা আজ সোমবার দুপুরে আসামিদের আদালতে সোপর্দ করি। আদালত তাঁদের জেলহাজতে পাঠান। মামলার অপর আসামিদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের কাছে রহস্যজনক মনে হলে আমরা তদন্তে নামি। পরে আমরা তদন্তে পাই যে এক নিরীহ ব্যবসায়ীকে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে ফাঁসানোর জন্য হেলপার জহিরুলকে ১০০ টাকা দিয়ে চার প্যাকেট ঢেঁড়সের বীজ ধরিয়ে দিয়ে ব্যবসায়ী মাসুদকে দিতে বলা হয়েছিল। পুরো ঘটনাটি মামুন নামে এক ব্যবসায়ী সাজিয়েছেন। পরে আমরা মামুন ও তুষারকে গ্রেপ্তার করি এবং ব্যবসায়ী মাসুদ, খোরশেদ ও বাস হেলপার জহিরুলকে ছেড়ে দেই। আমরা কোনো নিরীহ মানুষকে এভাবে ফাঁসানো হোক, এটা চাই না।’