প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গৃহবধূর মৃত্যু, লাশ ফেলতে গিয়ে ধরা
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে দুই সন্তানের জননী জোনাকী আক্তারের (২২) মৃত্যু হয়েছে। প্রেমিক অনিক পাণ্ডে প্রেমিকার লাশ গুম করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়েন। পরে তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
গতকাল শনিবার বিকেলে বানিয়াচং-হবিগঞ্জ সড়কের শুঁটকী নদীর পাশের সড়কে জোনাকী আক্তারের লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় জনতা অনিক পাণ্ডেকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
পুলিশ জানায়, বানিয়াচং উপজেলার কাষ্টগড় গ্রামের অনিক পাণ্ডের (৩২) সঙ্গে কয়েক মাস আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয় একই উপজেলার রঘুচৌধুরীপাড়া গ্রামের গৃহবধূ জোনাকী আক্তারের। পরিচয়ের সময়ে অনিক পাণ্ডে জোনাকীর কাছে নিজেকে মুসলিম যুবক হিসেবে পরিচয় দেন। পরিচয় হওয়ার পর অনিক পাণ্ডের সঙ্গে প্রতিদিন মোবাইলে ও ফেসবুকে চ্যাটিংয়ে জোনাকীর কথাবার্তা চলছিল। জোনাকী অনিকের কাছে তাঁর সাংসারিক জীবনের অশান্তির কথা বলতেন। এতে অনিক তাঁকে সুখের রাজ্যে রাখবেন বলে প্রলোভন দিতেন। এভাবে কথা বলার পর তাঁদের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে অনিক জোনাকীকে তাঁর কর্মস্থল নেত্রকোনায় যেতে বলেন।
পুলিশ জানায়, ২০ থেকে ২৫ দিন আগে জোনাকী তাঁর তিন বছরের মেয়ে তন্বীকে নিয়ে নেত্রকোনায় পালিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর অনিকের সঙ্গে কথা বলে জোনাকী জানতে পারেন অনিক হিন্দু। এ অবস্থায় ঘরছাড়া হয়ে জোনাকী অনেকটা বিপাকে পড়েন। অন্যদিকে, অনিক মুসলিম গৃহবধূকে তাঁর স্ত্রী হিসেবে কীভাবে রাখবেন, এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। মানুষের কাছে নিজেদের স্বামী-স্ত্রী বোঝানোর জন্য জোনাকীকে বুঝিয়ে তাঁর কপালে সিঁদুর ও হাতে শাঁখা পরিয়ে তাঁকে স্ত্রী হিসেবে বাসায় তোলেন অনিক। অনিকের বাসায় থাকাবস্থায় জোনাকীর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে বারবার ফোন করেন। কিন্তু জোনাকী তাঁদের ফোন রিসিভ করছিলেন না। যেদিন জোনাকী অনিকের বাসায় যান, সেদিন অনিক তাঁর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হিন্দু জেনে জোনাকী তাঁর সঙ্গে দৈহিক মিলনে রাজি হননি। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। তাঁকে নির্যাতন শুরু করেন অনিক। তাঁর নির্যাতনের শিকার হয়েই জোনাকী গত শুক্রবার রাতে মারা যান। জোনাকী মারা যাওয়ার পরই অনিক তাঁর লাশ গুম করার জন্য নেত্রকোনা থেকে বানিয়াচংয়ের উদ্দেশে অ্যাম্বুলেন্সে করে রওনা দেন। গতকাল শনিবার বিকেলে হবিগঞ্জ-বানিয়াচং সড়কের শুঁটকী এলাকায় এসে লাশ পানিতে ফেলার সময় স্থানীয় লোকজন দেখে তাঁকে আটক করতে যান। একপর্যায়ে অনিক দৌড় দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পালাতে পারেননি। এ সময় লোকজন তাঁকে দৌড়ে আটক করেন। পরে বানিয়াচং থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তখন স্থানীয় লোকজন অনিক পাণ্ডেকে পুলিশে সোপর্দ করেন।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অনিক তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ও জোনাকীর পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে তিনি জোনাকীকে হত্যার কথা অস্বীকার করেন।
অনিক পুলিশকে জানান, শুক্রবার রাতে তাঁর কর্মস্থল থেকে বাসায় এসে জোনাকীর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। পরে লাশ নিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি রওনা দেন। পথে চিন্তায় পড়ে যান। লাশ বাড়িতে নিয়ে গেলেই বিপদ হতে পারে, তাই জোনাকীর লাশটি গুম করার জন্য পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরান হোসেন জানান, জনতা অনিক পাণ্ডেকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এ সময় জোনাকীর তিন বছরের শিশুসন্তান তন্বীকে উদ্ধার করা হয়। আটক হওয়ার পর অনিক পুলিশের কাছে জোনাকীর সঙ্গে তাঁর পরকীয়ার ঘটনার বর্ণনা দেন। তবে অনিক দাবি করেন, জোনাকী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
ওসি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। তদন্তের মাধ্যমেই জানা যাবে জোনাকীকে হত্যা করা হয়েছে নাকি তিনি আত্মহত্যা করেছেন।’
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) শেখ মো. সেলিম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে গৃহবধূর গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলেই জানা যাবে কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আমরা তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি।’