বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের শুনানি করতেই আদালত খোলার সিদ্ধান্ত : সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া অন্যতম আসামি গ্রেপ্তার ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের মামলার শুনানির জন্যই বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকা জেলা ও দায়রা আদালত চালু রাখা হয়।
আজ বুধবার দুপুরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে সুপ্রিমকোর্ট এ মামলার জন্য ঢাকা জেলা ও দায়রা আদালত ও অফিসের ৮ এপ্রিলের ছুটি বাতিল করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার সাইফুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গ্রেপ্তার সাজাপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (অব) আব্দুল মাজেদের মামলা শুনানি গ্রহন করতে সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে শুধুমাত্র ঢাকা জেলা ও দায়রা আদালত চালু রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে ১৪ এপ্রিল সরকারি ছুটি পর্যন্ত দেশের সকল আদালত বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এদিকে আদালত খোলার পর দুপুরে আসামি ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদের (অব) বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
আজ বুধবার ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ হেলাল উদ্দিন খান চৌধুরী এই আদেশ দেন।
এর আগে আজ বুধবার দুপুর সোয়া ১টায় কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মাজেদের মৃত্যুপরোয়ানা সংক্রান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাজেদেকে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক জুলফিকার হায়াত। গত সোমবার রাতে রাজধানী ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯৯৬ সালে প্রথম মামলা দায়ের করা হয়। সেখানে আসামি করা হয় ২৪ জনকে। এর পরে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বিচারিক আদালত ওই মামলায় ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন।এরপরে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণের শুনানি শেষে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিভক্ত রায় দেন। বিচারপতি এম রুহুল আমিন ১৫ আসামির ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। খালাস দেন পাঁচ আসামিকে। অপর বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ১৫ আসামির সবার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
পরবর্তীতে ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। খালাস দেন তিনজনকে। এই ১২ আসামির মধ্যে একজন মারা গেছেন, ছয়জন পলাতক রয়েছেন। অপর পাঁচজন কারাগারে আটক ছিলেন।
দীর্ঘ ছয় বছর পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আপিল বিভাগে একজন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পর ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্ব তিন বিচারপতির বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। এর প্রায় দুই বছর পর ২০০৯ সালের ২৪ আগস্ট আপিল শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওই বছরের ৫ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করেন। আপিল শুনানির জন্য তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এমএম রুহুল আমিন ৪ অক্টোবর পরবর্তী প্রধান বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ গঠন করেন। আপিল বিভাগ গত ৫ অক্টোবর থেকে টানা ২৯ কর্মদিবস শুনানি করার পর ১৯ নভেম্বর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন। এরপর করা পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) ও শেখ রেহানা সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
তারা হলেন, লেফট্যানেন্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লেফট্যানেন্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর বজলুল হুদা, লেফট্যানেন্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি) ও লেফট্যানেন্ট কর্নেল একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার)।
এছাড়ও এ মামলার পাঁচ আসামি বিদেশে পালিয়ে রয়েছে। পলাতক এ পাঁচজন হলো, আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম রাশেদ চৌধুরী, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন। এদের মধ্যে কানাডায় নূর চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রাশেদ চৌধুরী। মোসলেম উদ্দিন জার্মানিতে ও শরিফুল হক ডালিম স্পেনে আছে। তবে খন্দকার আবদুর রশিদ কোন দেশে অবস্থান করছে, তার সঠিক তথ্য জানা যায়নি।