বনাঞ্চলে প্রশিক্ষণ একাডেমি জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ
বনাঞ্চল ধ্বংস করে কক্সবাজারে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে ২০টি পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠন। আজ রোববার সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা জানান, সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ করতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন শুকনাছড়ির রক্ষিত বনভূমির ৭০০ একর জমি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ এলাকাটি প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন।
এ ছাড়া বিপন্ন এশীয় বন্যহাতিসহ দেশের অনেক বিপন্নপ্রায় বন্যপ্রাণীর নিরাপদ বসতি কক্সবাজারের এই বনভূমি। এই বনভূমিতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, তা স্পষ্টত আইনবিরোধী এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। তাই এডমিন একাডেমির নামে দেওয়া অবৈধ বন্দোবস্ত দ্রুত বাতিল করতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, ১৯৯০ সালে জারি করা ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি পরিপত্রে উল্লেখ রয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড় ও পাহাড়ের ঢাল বন্দোবস্তযোগ্য নয়। পাশাপাশি, ওই জমি মূলত বনবিভাগ বনায়নের জন্য ব্যবহার করবে। বন আইন অনুযায়ী, এ ধরনের রক্ষিত বনে কোনো ধরনের স্থাপনা করা নিষিদ্ধ।
সমাবেশে বক্তারা দাবি করেন, ভূমি মন্ত্রণালয় দেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ সংরক্ষিত এ বনভূমিকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে খাসজমি হিসেবে দেখিয়েছে। ঝিলংজা মৌজার এ বনভূমি যে খাসজমি নয়, এটা সরকারি নথি ও রেকর্ডেই আছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব মালিকানাধীন ছাড়া যেকোনো জমি কাউকে দিতে হলে তা আগে অধিগ্রহণ করতে হবে। ভূমি মন্ত্রণালয় এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বরং চার হাজার ৮০০ কোটি টাকা মূল্যের ৭০০ একর জমি মাত্র এক লাখ টাকায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের কাজে রাষ্ট্রের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
বক্তারা বলেন, সরকারি কর্মচারীরা যথেচ্ছভাবে ক্ষমতা, সরকারি অর্থ ও সম্পদের ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। দুর্নীতি ও অনিয়মের নতুন নতুন পথ নির্মাণ করছেন। কক্সবাজার নতুন প্রশাসন একাডেমি এমন আরেকটি উদ্যোগ মাত্র। জনগণের অর্থের অপচয় ও বিশাল একটি বন এবং এর জীববৈচিত্র্য নষ্ট করা ছাড়া এ থেকে কোনো ফল মিলবে না।
সমাবেশে বক্তব্য দেন কক্সবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মুহম্মদ নুরুল ইসলাম, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম, বাপার কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ, ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির প্রধান নির্বাহী ও বেলার সদস্য ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ মামুন, বাপা কক্সবাজারের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, ১২ সামাজিক সংগঠনের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম, কক্সবাজার জনসুরক্ষা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক ইমাম খাইর, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসলাম মাহামুদ, কক্সবাজার জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সাধারণ সম্পাদক শামশুল আলম শ্রাবণ, দরিয়ানগর গ্রিন ভয়েসের সভাপতি পারভেজ মোশারফ, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান সায়েম প্রমুখ।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন টিম ইলেভেন কক্সবাজারের সভাপতি ইরফান, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবছার, সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলা সভাপতি ওমর ফয়েজ হৃদয়, সাধারণ সম্পাদক ইফাজ উদ্দিন আহমেদ ইমু, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের সমন্বয়কারী জিমরান মো. সায়েক, টেকপাড়া রাখাইন ছাত্র পরিষদের সভাপতি উথান্ট অং, সাধারণ সম্পাদক জনি রাখাইন, রাখাইন ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মং সেন য়াইন, সাধারণ সম্পাদক জ জ ইয়ুদি, একতা ছাত্র পরিষদের সভাপতি ওয়াসিম মাহমুদ অভি, সাধারণ সম্পাদক ইয়াছির আরাফাত, বড় বাজার রাখাইন যুব সংঘ সভাপতি উসেন হেন, সাধারণ সম্পাদক জ জ, রাখাইন একতা সংঘের সভাপতি উসেনমি সাধারণ সম্পাদক ক্য লা, রাজধানী ফ্রেন্ডস সার্কেলের সভাপতি এম. এ আজিজ রাসেল, সাধারণ সম্পাদক উসেন থোয়েন প্রমুখ।