বর্ষবরণে শ্লীলতাহানি : ৮ বছরেও শেষ হয়নি বিচার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঘটেছিল নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা। এই পহেলা বৈশাখে তার আট বছর পূর্ণ হচ্ছে। দীর্ঘ সময় পার হলেও শেষ হয়নি মামলার বিচারকাজ। অভিযোগপত্রের ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে সাতজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করতে পেরেছেন আদালত। বর্তমানে নতুন দিন ধার্য আছে। আগামী ২৪ এপ্রিল নেওয়া হবে সাক্ষ্য।
বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নারীদের শ্লীলতাহানীর মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮-এর বিচারক বেগম আফরোজা পারভীনের আদালতে বিচারাধীন। এ মামলার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এ বিচারাধীন ছিল। এরপরে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫-এ বদলি হয়ে আসে। পরবর্তীতে এখতিয়ার ভাগ হওয়ায় বর্তমানে এই আদালতে আসে এবং এই আদালতে এখন বিচার চলছে।’
আইনজীবী বলেন, ‘মামলায় সাতজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে সমন জারি করা হয়েছিল। সমন জারির পরেও হাজির না হওয়ায় অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সাক্ষীদের আনার চেষ্টা করছি এবং সাক্ষী হাজিরের মাধ্যমে দ্রুত মামলা নিষ্পতির চেষ্টা করব।’
পিপি বলেন, ‘এই মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে বেশিরভাগ পুলিশ সদস্য। তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় বদলি হয়ে গেছেন। তাই সাক্ষীদের খুঁজে পেতে বেগ পেতে হচ্ছে এবং আদালতে সাক্ষী হাজির করার বিষয়ে পুলিশেরও ভূমিকা রয়েছে।’
বাদী পক্ষের আইনজীবী আনিসুর রহমান বলেন, ‘মামলার এজাহারে কামালের নাম ছিল না। পুনর্তদন্তে তার নাম এসেছে। তিনি ডায়াবেটিস রোগী। এজন্য তিনি সেদিন বের হন হাঁটাহাঁটির উদ্দেশে। সেখানে এ ঘটনা ঘটেছে, তিনি তা জানতেনই না। তিনি সেখান থেকে হেঁটে এসেছেন, সেই ভিডিওর ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু, তিনি কাউকে ধরেছেন বা শ্লীলতাহানী করেছেন, এমন কিছু নেই। তিনি অপরাধ সম্পর্কে জানতেন না।’
এই আইনজীবীর দাবি, ‘পুলিশ সঠিক আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।’
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারীদের লাঞ্ছনা করা হয়। এ ঘটনায় শাহবাগ থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এ ঘটনাটির ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আট লাঞ্ছনাকারীকে শনাক্তের পর গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশ করে পুলিশ। তাদের ধরিয়ে দিতে লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর মো. কামালকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এর আগে ২০১৫ সালের জানুয়ারি চকবাজারের খাজে দেওয়ান রোডের প্রথম লেনের ৭৭ নম্বর বাড়ি থেকে মো. কামালকে গ্রেপ্তার করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। গ্রেপ্তারের পর কামালকে রিমান্ডে নেওয়া হয়।
২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক কুমার দাস এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে বলা হয়, এ ঘটনায় কোনো আসামিকে খুঁজে না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হলো।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যৌন হয়রানির ঘটনা গোপন ও প্রকাশ্য তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। তবে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চিহ্নিত আট যৌন হয়রানিকারীকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। এ ছাড়া তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে ৮ থেকে ১০ জন ব্যক্তি নারীদের শাড়ি ধরে টান দেয়। তদন্তে সাক্ষ্যপ্রমাণ ও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় মামলার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হয়।
পরে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার প্রতিবেদনটি গ্রহণ না করে পুনর্তদন্তের নির্দেশ দেন।