বশেমুরবিপ্রবির ঘটনায় আটক ছয় জন ‘ধর্ষণে সরাসরি জড়িত’
গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ছাত্রীকে দলগত ধর্ষণের ঘটনায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হাতে আটক ছয় জনই ধর্ষণে সরাসরি জড়িত বলে দাবি করা হয়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আজ শনিবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গতকাল রাতে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে আটক ছয় জন হলেন—রাকিব মিয়া ওরফে ইমন (২২), পিয়াস ফকির (২৬), প্রদীপ বিশ্বাস (২৪), নাহিদ রায়হান (২৪), মো. হেলাল (২৪) ও তূর্য মোহন্ত (২৬)।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আটকদের সামনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে হাজির করা হয়। সে সময় ওই শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ওই ছয় জনই সরাসরি ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত।’
কমান্ডার মঈন আরও বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে থাকা এক বন্ধুও আটক ছয় জনকে শনাক্ত করেছেন। এ ব্যাপারে গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরাও প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।’
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ভুক্তভোগীসহ দুই শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জ সদরের নবীনবাগ হেলিপ্যাডের সামনে থেকে হেঁটে মেসে ফিরছিলেন। এ সময় আটক ছয় ধর্ষণকারী তাঁদের নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে। এতে বাগ্বিতণ্ডায় লিপ্ত হন তাঁরা। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীকে জোর করে স্থানীয় একটি নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে দলগতভাবে ধর্ষণ করেন।
এ ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাঁদের যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন দেন। তাঁরা জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ জানান।
ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈনের দাবি, গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তাঁরা মূলত রাকিবের নেতৃত্বে স্থানীয় একটি অপরাধ চক্রের সদস্য। তাঁরা সবাই গোপালগঞ্জ ও আশপাশের এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা।
র্যাবের দাবি, আটক রাকিব মিয়া ওরফে ইমন একটি ক্লিনিকে রিসেপশনিস্ট এবং পিয়াস ফকির গোপালঞ্জের পাওয়ার হাউসে চাকরি করতেন। প্রদীপ বিশ্বাস এসি ও ফ্রিজ মেরামতের কাজ করতেন। আর, হেলাল একটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউশন সেলস কর্মকর্তা ছিলেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আটক তূর্য মোহন্ত খুলনার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৮ সালে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীকালে তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ালেখার জন্য বিদেশে যান। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে শেষ বর্ষে থাকাকালীন কোভিড পরিস্থিতির কারণে তিনি দেশে চলে আসেন এবং গোপালগঞ্জে সদরে গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।’
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার তূর্য মোহন্ত ছাড়া বাকিরা দীর্ঘ দিন ধরে নবীনবাগে মাদক সেবন, আড্ডা, জুয়াসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। করতেন চুরি ছিনতাইও। একই সঙ্গে রাস্তাঘাটে স্কুল-কলেজ ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতেন। তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও রয়েছে।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ ঘটনায় বৃহস্পতিবার তিন জনকে আটক করে পুলিশ। এঁরা হলেন— শহরতলীর সোনাকূড় গ্রামের পিয়াল (২২), সুইপার কলোনীর অন্তর (২২) ও জীবন (২৩)। পরে গতকাল শুক্রবার গোপালগঞ্জের বনগ্রাম থেকে ফরিদ নামে আরও একজনকে আটক করে গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। আর একই দিনগত রাতে র্যাবের হাতে আটক হয় আরও ছয় জন। সব মিলিয়ে বশেমুরবিপ্রবির ছাত্রী ধর্ষণ ঘটনায় আটক হয়েছে ১০ জন।