বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলায় ৬ আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ছয় আসামি আজ রোবাবার গোপালগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ছয় আসামি রাকিব মিয়া ওরফে ইমন (২২), পিয়াস ফকির (২৬), প্রদীপ বিশ্বাস (২৪), মো. হেলাল সরদার (২৪), অহিদুজ্জামানের মো. নাহিদ রায়হান (২৪) ও তূর্য মোহন্তকে (২৬) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হুমায়ুন কবিরের আদালতে হাজির করা হয়। আসামিদের প্রত্যেকে বিচারকের সামনে ১৬৪ ধারায় ধর্ষণের ঘটনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
জবানবন্দি শেষে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় আদালতের বিচারক তাদের গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
ধর্ষণ মামলার আসামিরা হলেন শহরতলীর চরমানিকদাহ মিয়াবাড়ি গ্রামের রাকিব মিয়া ওরফে ইমন, শহরের নবীনবাগ মার্কাস মহল্লার পিয়াস ফকির, নবীনবাগ এলাকার প্রদীপ বিশ্বাস, একই এলাকার মো. নাহিদ রায়হান, শহরের মার্কাস মহল্লার মো. হেলাল এবং পাশের বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট উপজেলার মৌপুড়া গ্রামের তূর্য মোহন্ত। তূর্য মোহন্ত। তারা বর্তমানে নবীনবাগের মিরাজ মিয়ার বাড়িতে ভাড়াবাসায় থাকে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শীতল চন্দ্র পাল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর আসামিদের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আবেদন করেন।
গতকাল শনিবার ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাবের হেফাজতে থাকা ছয় আসামিকে রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করে। এর আগে গত বুধবার রাতে শহরতলীর হেলিপ্যাড থেকে ম্যাসে ফেরার পথে জোরকরে তুলে নিয়ে জেলা প্রশাসনের নির্মাণাধীন ভবনে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় ।
এদিকে ধর্ষকদের প্রতীকী ফাঁসি, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, সংবাদ সম্মেলন, ধর্ষণ বিরোধী নাটক, সন্ধ্যায় আলোর মিছিলের মধ্য দিয়ে গোপালগঞ্জ বশেমুরবিপ্রবিতে চতুর্থ দিনের মতো লাগাতার আন্দোলন পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার সকাল ১০টায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনরতরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের বিস্তারিত তুলে ধরেন মুখপাত্র পিউ মৃধা। তিনি বলেন, আমাদের এক শিক্ষার্থী গণধর্ষণ হলে বিচারের দাবিতে আমরা আন্দোলন শুরু করি। আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগতরা হামলা চালায়। এতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকজন আহত হন। কিন্তু এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের চিহ্নিত করে মামলা করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় প্রশাসন। আমরা দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানাই।
পিউ আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের উপর থেকে আমরা আস্থা হারিয়েছি। আমরা এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর আস্থা রাখি। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাস পেলে আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে আমরা ক্লাসে ফিরে যাব। পরে তিনি পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এরপর বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে বশেমুরবিপ্রবির গোপালগঞ্জের জেলা পরিবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে ধর্ষকদের প্রতীকী ফাঁসি কার্যকর করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এরপর ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিকেলে ক্যাম্পাসে ধর্ষণবিরোধী নাটক পরিবেশন করে শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় আলোর মিছিল ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।