বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে পেঁয়াজ, সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বাড়ল ২০ টাকা
রাজধানীসহ সারা দেশে পেঁয়াজের ঝাঁজ উত্তাপ ছড়াচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ টাকারও বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম আরও একটু বাড়তে পারে। আর, ক্রেতাদের অভিযোগ—প্রতি বছরই পেঁয়াদের দাম বাড়ে, যা দেখভাল করার মতো কাউকে দেখেন না তাঁরা।
আজ রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে। আজ পাবনার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে, যা গত শুক্রবারের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে ৬০ টাকা কেজি দরে।
বাজারে পেঁয়াজের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে টম্যাটোর দাম। আজ শুক্রবার ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে টম্যাটো বিক্রি হতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এরপর টম্যাটোর দাম হয়তো কমবে না অনেকদিন। আলুসহ বেশ কয়েক ধরনের সবজির দাম গত সপ্তাহের মতো আছে।
দেশি মুরগির দাম বেড়েছে
এদিকে, দফায় দফায় বাড়তে থাকা ব্রয়লার এবং পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দাম নতুন করে আরও ১০ টাকা কেজিপ্রতি বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। আর, সোনালি মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। দেশি মুরগির দাম অবশ্য একটু বেশিই বেড়েছে। ৮০০ গ্রাম ওজনের দেশি মুরগির দাম ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩১০ টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা।
পেঁয়াজের ঝাঁজ
আব্দুর সবুর নামের এক পেঁয়াজ বিক্রেতা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত শুক্রবারও পেঁয়াজ বিক্রি করেছি কেজিপ্রতি ৪৫ টাকা। আজ পাইকারি কিনেছি ৬৫ টাকা। বিক্রি করছি ৭০ টাকা। আমার মনে হচ্ছে—পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে। তবে, বিক্রি কমে গেছে। আগে যাঁরা এক কেজি কিনতেন, তাঁরা এখন ৫০০ গ্রাম কিনছেন। গত সোমবারও পাইকারি সাড়ে ৫৭ করে কিনেছি। আজ কিনেছি ৬৫ টাকা। এ পার্থক্য আরও বাড়তে পারে। বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। এ কারণে ফরিদপুরের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তি।’
সবজির বাজার ভালো-খারাপ মিলিয়ে
চড়াদামে বিক্রি হচ্ছে বেশ কিছু সবজি। মানভেদে এক কেজি গাজর ১০০ থেকে ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে, টম্যাটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজি দুটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে, শীতের আগাম সবজি শিমের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেশ বেড়েছে। আজ বাজারে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। কমেছে ঝিঙের দাম। এক সপ্তাহ আগে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঝিঙের দাম কমে এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আসা শীতের অন্য আগাম সবজির মধ্যে ছোট ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। যদিও কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এখন ফুলকপি ও বাঁধাকপি মূলত ১২ মাসই পাওয়া যায়। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। এ সবজিগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে খুব একটা পরিবর্তিত হয়নি।
এ ছাড়া চিচিঙ্গা, বরবটি, ঢেঁড়শ, পটল, করলার দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়শের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে, বরবটির কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। কাঁচকলার হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লাল শাকের আঁটি ১০ থেকে ২০ টাকা, মুলা শাকের আঁটি ১৫ থেকে ২০ টাক, কলমি শাকের আঁটি ৫ থেকে ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।
কুদ্দুস আলী নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, সবজির বাজার মোটামুটি খারাপ না। দাম খুব একটা বাড়েনি। আশা করছি দ্রুতই শীতেরে সবজির দাম কমে যাবে। কারণ, সরবরাহ বাড়ছে। বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। আদা ও রসুন বিক্রি হচ্ছে ১১- টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। গত সাত দিনে এসবের দাম বাড়েনি বলে মত ব্যবসায়ীর।
কারওয়ান বাজারে আসা ক্রেতা সবুজ সোহেন বলেন, ‘পেঁয়াজের যা দাম, ভাবছি দু-তিন কেজি কিনে রাখব কি না। দাম তো গত দু-বছরের মতো আবারও বাড়তে পারে। তখন অনেক দামে পেঁয়াজ কিনে খেতে হবে। এসব দেখার তো কোনো লোকও নেই। প্রতিবার হঠাৎ হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ে। এ ছাড়া আরও অনেক কিছুর দামই বাড়তি। মাত্র কটা টাকা আয় করি, কিনতে কিনতে সব শেষ।’