বেনাপোলে দুই পরিবারের মারামারি দেখতে গিয়ে প্রতিবেশী নিহত
যশোরের বেনাপোলের পোড়াবাড়ি নারায়ণপুর গ্রামে আজ শুক্রবার বিকেলে বিনয় বিশ্বাস ও মণি ঠাকুরের পরিবারের মধ্যে মারামারির ঘটনা দেখতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে শশীভূষণ বিশ্বাস (৭০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিনয় বিশ্বাসসহ ছয় জনকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।
গ্রামবাসী জানায়, শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে বিনয় বিশ্বাস ও মণি ঠাকুরের পরিবারের মধ্যে বাড়ির সামনে মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে কলহ বাধে। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে মারামারি বেধে যায়। এ সময় বিনয় বিশ্বাসের ছেলে শুভঙ্কর বিশ্বাস ও আব্বাসের ছেলে বাবু পাইপ দিয়ে মণি ঠাকুর ও তার স্ত্রী মামণি ঠাকুরকে পেটাতে থাকে। তাদের মারামারি মীমাংসা করার জন্য আশপাশ থেকে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। মণি ঠাকুর ও তার স্ত্রী মামণি ঠাকুরকে বাঁচাতে ছুটে যান শশীভূষণ বিশ্বাস। এ সময় উভয়ের ধাক্কাধাক্কিতে শশীভূষণ মাটিতে পড়ে গেলে শশীভূষণের ছেলে বিপ্লব বিশ্বাস বাবাকে মাটি থেকে তুলতে গেলে বিনয় বিশ্বাস, তার ছেলে শুভঙ্কর বিশ্বাস ও আব্বাসের ছেলে বাবু বিপ্লবকে পাইপ দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। ছেলেকে মারতে দেখে শশীভূষণ বিশ্বাস মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে শার্শা বুরুজবাগান হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।
যদিও স্থানীয়রা বলছেন, শশীভূষণ হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। এসব ঘটনা দেখে সহ্য করতে না পেরে মারা যেতে পারেন।
নিহত শশীভূষণ বিশ্বাসের ছেলে বিপ্লব বিশ্বাস বলেন, ‘বিনয় বিশ্বাস, তার ছেলে শুভঙ্কর বিশ্বাস ও তাদের লোকজন মণি ঠাকুর ও তার স্ত্রী মামণি ঠাকুরকে মারছিলেন। বাবা ঠেকাতে গেলে বিনয় বিশ্বাস বাবাকে ধাক্কা দিলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। এ সময় আমি দৌড়ে এসে বাবাকে তুলতে গেলে বিনয় বিশ্বাসের লোকজন আমাকে পাইপ দিয়ে মারতে থাকে। সে মারের আঘাত বাবার গায়েও লাগে। এ সময় বাবা মাটিতে ফের লুটিয়ে পড়েন। তারপর আমি আর কিছু জানি না। বিনয় বিশ্বাসের লোকজন আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে।’
এসব কথা তিনি বেনাপোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে ঘটনাস্থলে বলছিলেন এবং এর বিচার দাবি করছিলেন।
বিনয় বিশ্বাস বলেন, ‘মণি ঠাকুর আমার বাড়ির পাশ থেকে মাটি কাটছিল। মাটি কাটতে নিষেধ করায় মণি ঠাকুর ও তার স্ত্রী ঝগড়া বাধায়। ঝগড়ার একপর্যায়ে আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে মারামারি বেধে যায়। এ সময় শশীভূষণ বিশ্বাস মারামারির মাঝে এসে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে কেউ কোনোভাবে আঘাত করেনি।’
বেনাপোল ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান বলেন, ‘বিনয় বিশ্বাস ও মণি ঠাকুরের পরিবারের ঝামেলা দীর্ঘদিনের। প্রায়ই দুই পরিবারের মাধ্যে কলহ বাধতো। আজ শুক্রবার বিকেলে কলহ বাধলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন মীমাংসা করার জন্য। শশীভূষণও আসেন সেখানে। মারামারির মধ্যে পড়ে ধাক্কাধাক্কিতে মাটিতে পড়ে গেলে হার্টঅ্যাটাক করে মারা যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ এর আগে তার দুবার হার্টঅ্যাটাক হয়েছিল।’
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন ভূইয়া বলেন, ‘বেনাপোল পোড়াবাড়ি নারায়ণপুর গ্রামে দুই পরিবারের মারামারির মাঝে পড়ে শশীভূষণ বিশ্বাস নামে একজন মারা গেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ যশোর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কীভাবে মারা গেছেন, সেটা বলা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিনয় বিশ্বাস ও তার ছেলে শুভঙ্কর বিশ্বাস, আব্বাস ও তার ছেলে বাবু, মণি ঠাকুর ও তার স্ত্রী মামণি ঠাকুরকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।’