বোরকা পরে নৌকায় করে ভারতে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সাহেদ
বহুল আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতাল প্রতারণা মামলার প্রধান আসামি ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত দিয়ে নৌকায় করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় তিনি জিন্সের প্যান্ট ও নীল রঙের শার্টের ওপর কালো রঙের বোরকা পরে ছিলেন। এমন অবস্থায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাবের সাতক্ষীরার কোম্পানি কমান্ডার (সিপিসি-১) বজলুর রশীদ এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য জানান।
বজলুর রশীদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর বেইলি ব্রিজের দক্ষিণ পাশের লবঙ্গবতী নদীর পাড় থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। নদীর ঠিক ধারে একটি নৌকা রাখা ছিল। ওই নৌকায় উঠে ভারতে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সাহেদ। ঠিক সে সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
সাহেদের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও তিন রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়েছে বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা। গ্রেপ্তারের পর সাহেদকে সাতক্ষীরা জেলা স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর জন্য হেলিকপ্টার রাখা আছে। ওই হেলিকপ্টারে করে সাহেদকে ঢাকায় নিয়ে আসছে র্যাব।
বজলুর রশীদ বলেন, ‘র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল সাহেদ তাঁর নিজ জেলা সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতে সদর দপ্তর থেকে গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ স্যারেরা এখানে এসেছেন। সারা রাত আমরা সীমান্ত এলাকায় আমাদের টহল জোরদার করি। রাতভর অভিযান শেষে ভোর ৫টা ১০ মিনিটে আমরা তাঁকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই।’
এদিকে, র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আশিক বিল্লাহ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজ বুধবার ভোর ৫টা ১০ মিনিটের দিকে র্যাবের বিশেষ অভিযানে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত এলাকা থেকে মো. সাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কাছে অবৈধ বিদেশি পিস্তল ও গুলি পাওয়া গেছে।’
চিকিৎসাসেবা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে গত ৬ জুলাই বিকেল থেকে রাত অবধি উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালের মূল কার্যালয়ে প্রথমে অভিযান পরিচালনা করেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেখান থেকে অভিযান শেষে হাসপাতালটির মিরপুর শাখায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় হাসপাতালটির আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটক করা হয়।
এরপর ৭ জুলাই রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের কোভিড ডেডিকেটেড রিজেন্ট হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয় র্যাব-১। এ ছাড়া উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের রিজেন্ট গ্রুপের মূল কার্যালয়ও সিলগালা করা হয়। ৭ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করা হয়।
রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি প্রায় সাড়ে চার হাজার করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছে। একজন কম্পিউটার অপারেটর বসে বসে সাড়ে চার হাজার রিপোর্ট তৈরি করেছেন। মনগড়া রিপোর্ট পজিটিভ-নেগেটিভ দিয়েছেন।
তা ছাড়া মোট ১০ হাজার রোগীর করোনা টেস্টের নমুনা সংগ্রহ করে রিজেন্ট হাসপাতাল। মাত্র চার হাজার ২৬৪টি নমুনা সরকারিভাবে টেস্ট করে রিপোর্ট দেয়। এ ক্ষেত্রে ভয়াবহ প্রতারণার কৌশল গ্রহণ করে রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারো জ্বর থাকলে তাকে পজিটিভ আর জ্বর না থাকলে নেগেটিভ রিপোর্ট প্রদান করে।