ব্যবসার নামে মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে : শিল্প প্রতিমন্ত্রী
দেশের অর্থনীতি ও বাজার ব্যবস্থায় বিদ্যমান সিন্ডিকেটের কঠোর সমালোচনা করেছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। তারপরেও সিন্ডিকেটের কারণে দেশে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। আমি অনেককে দেখেছি বাজার করতে গিয়ে কাঁদছেন। কারণ বাজারের যেই অবস্থা, তার পকেটে সেই পরিমাণ টাকা নেই। ব্যবসার নামে আজ লুটপাট হচ্ছে, মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ মে) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত কর্মশালায় শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এসব কথা বলেন।
কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘অর্থনীতি ও বাজার দুই জায়গাতেই সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। যার কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঝরে পড়ছেন এবং পণ্যের মূল্য বেড়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। তারপরও দেশে আজকে যে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে, ব্যবসার নামে আজ যে লুটপাট হচ্ছে, মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে এগুলো সাংবাদিকদের আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে।’
শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন বাজারে যাই তখন দেখি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কেন এই ঊর্ধ্বগতি? আমাদের কিন্তু কোনো কিছুর অভাব নেই। আমরা প্রতিটা ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তারপরও সিন্ডিকেটের কারণে দেশের এই অবস্থা বিরাজ করছে। অবাক লাগে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে লাখ লাখ বেকার, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ কিন্তু মওকুফ করা হয় না। যারা ব্যাংক থেকে লাখ-কোটি টাকা নিয়ে খেলাপি হয়েছে, তাদেরটাই বারবার মওকুফ করা হচ্ছে। তারা মওকুফ পেয়ে আবার ঋণ নিচ্ছে।’
‘বড় খেলাপিদের এই ঋণগুলো যদি এসএমই ফাউন্ডেশনসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের দেওয়া হতো, তবে তাদের ব্যবসা আরও সমৃদ্ধশালী হতো। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না’, যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘আমি দেখেছি–অনেককে ব্রিফকেস নিয়ে ঘুরত, অনেকের কাছে টাকা ছিল না, অন্যের কাছে সিগারেট চেয়ে খেত। আজকে তারা ব্যাংকের মালিক। তারা সরকারি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের মালিক হয়েছে। যারা সরকারি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের মালিক হয়েছেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিত তাদের নামগুলো প্রকাশ করা।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যেভাবে সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে, এই সিন্ডিকেট যদি আমরা ধরতে না পারি, এই সিন্ডিকেট যদি আমরা ভাঙতে না পারি, দেশের ১৭ কোটি মানুষের যে দুঃখ-কষ্ট তা যদি লাঘব না করতে পারি, তবে আমার মনে হয় আমাদের মতো লোকের মন্ত্রী থাকা উচিত না।’
প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ বলেন, ‘সুগার মিলের যারা আখচাষি ছিলেন, তারাই সুগার মিলের শ্রমিক, যার কারণে মিলগুলোতে লুটপাট হয়েছে। আর লুটপাটের কারণে মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। চিনির মিলগুলো যদি যথারীতি চালাতাম, তবে বাজারে চিনির দাম এত বাড়ত না। আমাদের এসএমই খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের যারা মুড়ি-চানাচুর বিক্রি করে চলত, সেখানেও দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলো হাত বাড়িয়েছে। যার কারণে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। আমরা যেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের উত্তোরোত্তর এগিয়ে নিতে পারি, আমাদের সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’
ইআরএফ ও এসএমই ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে কর্মশালা সঞ্চালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান।