ভার্চুয়াল আদালত বসছে সোমবার থেকে, শুধু জরুরি ও জামিন শুনানি হবে
সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের অধঃস্তন আদালত ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে কাল সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে। এজন্য হাইকোর্টের তিনটি বেঞ্চ গঠন এবং আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। এসব আদালতে শুধু জরুরি বিষয়াদি শুনানি হবে। অপরদিকে নিম্ন আদালতে শুধু জামিন শুনানির জন্য চালু রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আজ রোববার প্রধান বিচারপতির নেত্বত্বে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফুলকোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগের বিচারকাজ পরিচালনার জন্য চেম্বার জজ হিসেবে বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানকে মনোনয়ন দিয়েছেন।
বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান আগামী ১৪ ও ২০ মে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে চেম্বার কোর্টে শুনানি গ্রহণ করবেন।
প্রজ্ঞাপনে হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান অতীব জরুরি সব ধরনের রিট ও দেওয়ানি মোশন এবং তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র নেবেন। অতীব জরুরি সব ধরনের ফৌজদারি মোশন এবং তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র নেবেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। এ ছাড়া বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার সাকশেসন আইন, অ্যাডমিরালিটি কোর্ট আইন, ব্যাংক কোম্পানি আইনসসহ কয়েকটি আইনের অধীনে আবেদনপত্র, আপিল শুনানি গ্রহণ করবেন।
সন্ধ্যায় নিম্ন আদালতের জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আদালতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিচারকাজ চালানোর বিষয়ে অধ্যাদেশ জারির পরদিন নিম্ন আদালতের ভার্চুয়াল কোর্টে শুধু জামিন শুনানি করতে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপনে এসব উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় এবং এর ব্যাপক বিস্তার রোধকল্পে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সব আদালতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছুটির সময়ে বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলার জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর এলাকার মহানগর দায়রা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, বিশেষ জজ আদালতের বিচারক, সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারককে এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজে অথবা তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০ এবং উচ্চ আদালতের জারিকৃত বিশেষ প্রাকটিস নির্দেশনা’ অনুসরণ করে শুধু জামিন সংক্রান্ত বিষয়গুলো তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। এ ছাড়া মামলা পরিচালনার বিষয়ে ২১টি নির্দেশনা জারি করা হয়।
গত ২৬ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতে সাধারণ ছুটিতে আদালত বন্ধ রেখে ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এজন্য সুপ্রিম কোর্টের রুলস কমিটি পুনরায় গঠন এবং ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ওইদিন প্রথমবারের ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে ফুলকোর্ট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের ৮৮ জন বিচারপতি।
এ অবস্থায় গত ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভপতিত্বে গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
দুদিন পর ৯ মে ভার্চুয়াল কোর্ট সম্পর্কিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বা ক্ষেত্রমতো হাইকোর্ট বিভাগ, সময় সময়, প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে।
অধ্যাদেশে আরো বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাই থাকুক না কেন, যেকোনো আদালত এই অধ্যাদেশের ধারা ৫-এর অধীন জারি করা প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) সাপেক্ষে, অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষরা বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করে যেকোনো মামলার বিচার বা বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্য গ্রহণ বা যুক্ততর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় দিতে পারবেন।
অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষ বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি বা ক্ষেত্রমতে দেওয়ানি কার্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।
কোনো ব্যক্তির ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা হলে ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা অন্য কোনো আইনের অধীন আদালতে তাঁর সশরীরে উপস্থিতির বাধ্যবাধকতা শর্ত পূরণ হয়েছে বলে গণ্য হবে।