ভিকারুননিসার সাবেক অধ্যক্ষসহ দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও শাখাপ্রধান জিন্নাত আরার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। আজ রোববার ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম এ আদেশ দেন।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সালাহউদ্দিন হাওলাদার এনটিভি অনলাইনকে এ বিষয়ে বলেন, ‘আজ আদালতে এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ ছিল। সাক্ষ্য গ্রহণ উপলক্ষে সকালে অরিত্রীর মা বিউটি অধিকারী সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য গ্রহণের সময় মামলার আসামি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও শাখাপ্রধান জিন্নাত আরা আদালতে না আসায় বিচারক তাঁদের জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।’
এর আগে গত বছরের ২০ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক কাজী কামরুল ইসলাম ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও শাখাপ্রধান জিন্নাত আরার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অন্যদিকে অভিযোগপত্র প্রমাণ না হওয়ায় শ্রেণিশিক্ষিকা হাসনা হেনা অব্যাহতির আবেদন করেন।
২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর অরিত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী। মামলায় আসামি করা হয় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শাখাপ্রধান জিন্নাত আরা ও শ্রেণিশিক্ষিকা হাসনা হেনাকে। এর পরে শ্রেণিশিক্ষিকা হাসনা হেনাকে গ্রেপ্তার করা হলে ঢাকার সিএমএম আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। এর পরে ১৪ জানুয়ারি অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও শাখাপ্রধান জিন্নাত আরার জামিন মঞ্জুর করেন ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী।
এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর পরীক্ষার হলে নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন পান এক শিক্ষিকা। মোবাইল ফোনটি রেখে দিয়ে তিনি অরিত্রীর বাবা-মাকে নিয়ে পরের দিন আসতে বলেন। পরের দিন সোমবার বাবা-মাকে নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেন বাবা দিলীপ অধিকারী। পরে বাসায় গিয়ে অরিত্রীর ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়।
এরপর দিলীপ অধিকারী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা ভাইস প্রিন্সিপাল ও প্রিন্সিপালের রুমে গিয়ে তাঁদের ওই অভিযোগ শুনি। জোড় হাত করে ক্ষমা চাই। মেয়েও পায়ে ধরে ক্ষমা চায়। কিন্তু তাঁরা কোনো কিছুই শুনতে না চেয়ে বের হয়ে যেতে বলেন। বলেন, বের হয়ে যান, কাল এসে টিসি নিয়ে যাবেন। এ সময় দ্রুত বাসায় চলে যায় অরিত্রী। পেছনে পেছনে আমরাও যাই। বাসায় গিয়ে দেখি সে নিজের ঘরে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছে। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে এবং সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিকেল সাড়ে ৪টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
এদিকে, এ ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পরে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, তাঁর মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষক দায়ী।