‘ভয়ে রাতি ঘুমাতি পারি না’
নদীর ভাঙনের দিকে তাকালে শিউরে ওঠেন বৃদ্ধ কিশোরী পাল। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে গৃহহীন হয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করে তাঁর মধ্যে। কারণ বাপ-দাদার ভিটেমাটি নদীতে চলে যেতে দেখেছেন তিনি। এই প্রতিবেদককে দেখে সেই আবেগই প্রকাশ করলেন।
কালিয়া উপজেলার মাউলি ইউনিয়নের ঘোষিবাড়িয়া গ্রামের বৃদ্ধ কিশোরী পাল (৮০) বলেন, ‘গত বছর আমার তিনটে ঘর নদীতে চলি গেছে। আমি এহন গরিব মানুষ। আমার বাড়িঘর নাই। পরের জায়গায় একখান টিনের ছাপড়ার মধ্যি বাস করি। নদীর জলে এহন মেলা বেগ (স্রোত)। ভাঙনও শুরু হইছে। ছাপরাডা কি জলেই চলে যায়! ভয়ে রাতি ঘুমাতি পারি না।’
বৃদ্ধা কিশোরী পাল স্মৃতি হাতড়ে বলেন, ‘আমার বাপ-দাদার ভিটেমাটি সব নবগঙ্গা নদীতে চলি গেছে। চার বিঘে জমির ওপর আমাদের বাড়িঘর ছিল। বড় উঠোন ছিল। কয়েকশ মাটির কাঁচা হাঁড়ি-পাতিল তৈরি করে উঠোনের রোদে শুকুতে দিতাম। বাপ-দাদারা সব মইরে গেছে।’
মাউলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস কে সাজ্জাদ হোসেন জানান, মাউলি ইউনিয়নের ঘোষিবাড়িয়া গ্রামে ২০০ পাল সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে এখন সেখানে প্রায় ৫০ ঘর বসবাস করেন। এলাকার নবগঙ্গা নদীর মহাজন এলাকায় ভাঙন শুরু হলে সেখানে সিসি ব্লক দিয়ে ভাঙন রোধ করা হয়। এখন ভাঙন শুরু হয়েছে ঘোষিবাড়িয়া গ্রামে।’
চেয়ারম্যান বলেন, ‘নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে ১০টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে ৪০টি পরিবার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হলে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।’
সরেজমিন দেখা গেছে, কালিয়া উপজেলার মাউলি ইউনিয়নের ঘোষিবাড়িয়া গ্রামটি নবগঙ্গা নদীর তীরে। মহাজন খেয়াঘাট থেকে নদীটি ঘোষিবাড়িয়া গ্রামে বাঁক খেয়ে গাজীরহাট পিরোলিস্থানের আত্রাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। নদীতে এখন প্রচণ্ড স্রোত। এ কারণে ঘোষিবাড়িয়া গ্রামের এই বাঁকা স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
নদীর এই ভাঙন রোধ এবং এ থেকে রক্ষার দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে এলাকার মানুষ ভাঙন ওই স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। নদীর ভাঙন রোধে গ্রামবাসীকে রক্ষার দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে কিশোরী পালও যোগ দিয়েছিলেন।
এসএসসি পরীক্ষার্থী সঞ্চিতা পাল বলে, ‘নদী ভাঙনের কারণে রাতে অনেকে ঘুমাতে পারে না। গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে হঠাৎ করে ভাঙনের শব্দ শুনতে পাই। তখন আমি পড়তেছিলাম। ঘর থেকে বের হয়ে দেখি সামনের সব কিছু ফাঁকা ফাঁকা। ভয়ে সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে তুলি।’
কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মাউলি ঘোষিবাড়িয়া গ্রামের নদীভাঙনের বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে শুনেছি। ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
জানতে চাইলে নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকাদার বলেন, ‘ঘোষিবাড়িয়া এলাকার ভাঙনের বিষয়টি কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের জানিয়েছেন। ভাঙন প্রতিরোধে আপদকালীন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা জরুরিভিত্তিতে নেওয়া হবে। এরই মধ্যে অনেক স্থানে ভাঙন প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’