মওলানা ভাসানী থেকে শেখ হাসিনা : আ.লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন যারা
আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন আজ। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত দলটির বয়স ৭৩ পেরিয়েছে। দলটির রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলার সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এ দলটির অবদান অপরিসীম।
রাজনৈতিক এ দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। সে সময় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শামসুল হক ও প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। আর সর্বশেষ আজ ২২তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা আর সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের।
এর মধ্যে রাজনৈতিক মত ভিন্নতার কারণে ভাসানী ১৯৫৭ সালে দল ছেড়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করলে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ। ১৯৬৬ সালে ষষ্ঠ সম্মেলনে শেখ মুজিবকে করা হয় দলের সভাপতি।
প্রথম সম্মেলন হয় ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন। সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
দ্বিতীয় সম্মেলন হয় ১৯৫৩ সালের ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর। সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান।
তৃতীয় সম্মেলন হয় ২১ থেকে ২৩ অক্টোবর ১৯৫৫ সালে। সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। চতুর্থ সম্মেলন হয় ১৯৫৭ সালের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি। সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। ওই বছরেই আরেকটি বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৭ সালের ১৩ ও ১৪ জুন। সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
পঞ্চম সম্মেলন হয় ১৯৬৪ সালের ৬ ও ৮ মার্চ। এ সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। ষষ্ঠ সম্মেলন হয় ১৮ থেকে ২০ মার্চ, ১৯৬৬ সালে। এতে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ।
সপ্তম সম্মেলন হয় ১৯৬৭ সালের ১৯ আগস্ট। সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হয় শেখ মুজিবুর রহমান আর সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ। অষ্টম সম্মেলন হয় ৪ জুন ১৯৭০ সালে। সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ। নবম সম্মেলন হয় ১৯৭২ সালের ৭ ও ৮ এপ্রিল। সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
দশম সম্মেলন হয় ১৯৭৪ সালের ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি। সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন এ এইচ এম কামারুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান। ১১তম সম্মেলন হয় ১৯৭৭ সালের ৩ ও ৪ এপ্রিল। সম্মেলনে আহ্বায়ক নির্বাচিত হন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। তবে, এর আগে ১৯৭৬ সালে দল পুনরুজ্জীবনের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মহিউদ্দিন আহমেদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন।
১২তম সম্মেলন হয় ১৯৭৮ সালের ৩ থেকে ৫ মার্চ। সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন আবদুল মালেক উকিল আর সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক। ১৩তম সম্মেলন হয় ১৯৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি। সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা আর সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক। রাজ্জাক বহিষ্কৃত হলে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন। ১৪তম সম্মেলন হয় ১৯৮৭ সালের ১ থেকে ৩ জানুয়ারি। সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
১৫তম সম্মেলন হয় ১৯৯২ সালের ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর। সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান। ১৬তম সম্মেলন হয় ১৯৯৭ সালের ৬ ও ৭ মে। সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান। ১৭তম সম্মেলন হয় ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর। সে সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল। ১৮তম সম্মেলন হয় ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই। তখন সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
১৯তম সম্মেলন হয় ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সে সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ২০তম সম্মেলন হয় ২০১৬ সালের ২২-২৩ অক্টোবর। সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
২১তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ২০-২১ ডিসেম্বর। সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের ৭৩ বছরের যাত্রাপথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলের সভাপতি পদে ছিলেন চারবার। আর ১৯৭৫ সালের ঘাতকদের হাতে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য নিহত হওয়ার পর ১৯৮১ সালে নেতৃত্বে আসেন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে টানা ৪১ বছর তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব সামলে আসছেন।