মহামারির বন্ধ্যত্ব ঘুচিয়ে জেগেছে যশোরের সাংস্কৃতিক অঙ্গন
করোনা মহামারিতে দেশের অন্য সব সেক্টরের মতো সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও সৃষ্টি হয়েছিল বন্ধ্যত্বের। টানা দুই বছর পর সেই বন্ধ্যত্ব ঘুচিয়ে বর্ষবরণের মঙ্গল শোভাযাত্রায় মিলিত হতে আবারও জেগেছে যশোরের সাংস্কৃতিক অঙ্গন। শোভাযাত্রার শোভাবর্ধণে এখন মহাব্যস্ত শিল্পীরা। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোতে নাচ-গানের মহড়া চলছে অবিরাম।
চারুপীঠ আর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট যশোরের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ মাহবুব জামাল শামীম বলেন, যশোরের চারুপীঠ বর্ষবরণ উপলক্ষে ১৯৮৫ সালে প্রথম আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে। এর আগে এই উপমহাদেশে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে শোভাযাত্রার কোনো ইতিহাস নেই।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের সভাপতি সানোয়ার আলম খান দুলু বলেন, ‘বাংলা ১৩৯৩ বঙ্গাব্দে (১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দ) ঢাকার চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী শিল্পী মাহাবুব জামাল শামিম ও হিরন্ময় চন্দের উদ্যোগে চারুপীঠ যশোরের আয়োজনে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়। এর চার বছর পর এ দুই শিল্পীরই উৎসাহে ঢাকার চারুকলা বাংলা ১৩৯৭ ইংরেজি ১৯৮৯ সালে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে।’
সানোয়ার আলম খান দুলু আরও বলেন, ‘যশোর থেকেই মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্ম, এই ইতিহাস প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার।’
চারুপীঠের সেই আয়োজনের ধারাবাহিকতায় এবারও শোভাযাত্রাকে বর্ণিল করে তুলতে এখন ব্যস্ত শিল্পীরা।
চারুপীঠের সভাপতি মামুনুর রশিদ বলেন, ‘করোনার কারণে দুই বছর শোভাযাত্রা বন্ধ ছিল। তাই এবারের শোভাযাত্রা নিয়ে মানুষের মাঝে অনেক আগ্রহ আছে। শোভাযাত্রাকে বর্ণিল করতে চারুপীঠের শিল্পীরা বিশালাকৃতির মাছ, পুতুল, মুখোশ, সাজ-সজ্জার নানা জিনিস তৈরি করেছে। শিশুদেরকে নানান রূপে সাজানো হবে। সব প্রস্তুতিই এখন শেষ পর্যায়ে।’
এদিকে বর্ষবরণে উদীচী যশোরের আয়োজন অন্যমাত্রা ধারণ করেছে। গত ৪৮ বছর ধরে তারা যশোর পৌর উদ্যানে নতুন বছরের প্রথম প্রভাতে বর্ণিল অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। যশোর শহর ও আশপাশের এলাকার হাজার হাজার মানুষ নতুন পোশাকে পরিবার পরিজন নিয়ে বর্ষবরণের এই অনুষ্ঠানে হাজির হন। এবারও এ অনুষ্ঠানকে বর্ণাঢ্য করতে সব প্রস্তুতিই শেষ করেছে সংগঠনটি।
উদীচী যশোরের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘নববর্ষ উপলক্ষে প্রতিবছর উদীচী যশোরের নিজস্ব কার্যালয়, পৌর উদ্যানসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে অলঙ্করণ করা হয়। এবারও তা করা হচ্ছে। আর পৌর উদ্যানের অনুষ্ঠানে প্রতি বছরের মতো এবারও থাকবে পাঁচ গীতিকবির গান, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুল গীতি, বাংলাদেশের বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরে বিভিন্ন আয়োজন, সর্বোপরি এ অনুষ্ঠানে প্রতিবারই উদীচী যশোরের একটি নিজস্ব বক্তব্য থাকে, এবারও তা থাকবে।’
শহরের অন্য সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও তাদের নিজস্ব আয়োজন নিয়ে আলাদা আলাদা অনুষ্ঠান করবে। পবিত্র রমজান মাস হওয়ায় সব অনুষ্ঠান দিনের মধ্যেই শেষ করা হবে। তবে এ কারণে বর্ষবরণের কোন কর্মসূচিই বাদ দেওয়া হচ্ছে না।
বিবর্তন যশোরের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর বিশ্বাস বলেন, ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে বর্ষবরণের যে অনুষ্ঠানমালা, সেখানে বিবর্তন যশোরের অংশগ্রহণ থাকবে। পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তি ও নাটক নিয়ে থাকবে তাদের নিজস্ব আয়োজনও।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেসকো বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে তাদের ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে যশোরের এ শোভাযাত্রা।