যুবককে কীটনাশক পানে হত্যার অভিযোগ, পুত্রশোকে মায়ের মৃত্যু

পাবনায় পরকীয়ার মিথ্যা অপবাদে সালিশে জরিমানা এবং সেই টাকা দিতে না পারায় সবুজ ফকির নামের এক যুবককে কীটনাশক পানে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্যের বিরুদ্ধে। এদিকে, সন্তান হারানোর শোক সইতে না পেরে ঘটনার একদিন পরে মারা গেছেন যুবকের মা।
এ ঘটনার পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা না নেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
মৃত যুবকের নাম সবুজ ফকির (২২)। তিনি জেলার সদর উপজেলার দোখাছি ইউনিয়নের চরআশুতোষপুর গ্রামের বাসিন্দা।
নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেন, সবুজ ফকিরের সঙ্গে একই গ্রামের এক নারীর পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। এমন অভিযোগে সম্প্রতি সালিশের আয়োজন করে ৪ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আবু সাইদ। কোনো প্রমাণ ছাড়াই সালিশে সবুজকে দোষী সাব্যস্ত করে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ওই টাকা আদায়ে সময় বেঁধে দিয়ে জোরপূর্বক সুদে টাকা ধার নিতেও বাধ্য করেন সাইদ মেম্বার। নির্ধারিত সময়ে টাকা দিতে না পারায় গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে সবুজকে ডেকে নিয়ে অস্ত্রের মুখে কীটনাশক পান করিয়ে হত্যা করেন সাইদ ও তাঁর সহযোগীরা।
এদিকে, পুত্র হত্যার শোক সইতে না পেরে একদিন পর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান মা আনোয়ারা খাতুন (৫০)। এমন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন স্বজনরা।
নিহত সবুজের বাবা আব্দুস সালাম ফকির অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ছেলের সঙ্গে কারো অনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। ভাইবোনের সম্পর্ককে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সাইদ মেম্বার সালিশে জরিমানা করেন। জোর করে স্ট্যাম্পে সই নিয়ে টাকা দিতে চাপ দেন। গত ২৯ ডিসেম্বর রাত ১১টার দিকে বাড়ি থেকে ডেকে গলায় ছুরি ধরে তাঁকে কীটনাশক (গ্যাস ট্যাবলেট) খেতে বাধ্য করে। বাড়ি ফিরে এ কথা জানাতেই আমার হাতের ওপরই ছেলে মারা যান। ছেলে হারানোর শোকে আমার স্ত্রীও মারা গেছেন। আমার আর বেঁচে থেকে কি লাভ?’
হত্যার অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত উল্লেখ করে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র। স্থানীয় মুরুব্বি ও গ্রামবাসীর মতামতের ভিত্তিতেই সালিশের রায় ও জরিমানা করা হয়েছে। তবে, টাকা আদায়ে কোনো চাপ দেওয়া হয়নি। তিনি কিভাবে মারা গেছেন তাও আমার জানা নেই। ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে ‘উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে’ চাপিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এদিকে, নিহতের চাচা সুরুজ দেওয়ান অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ৩০ ডিসেম্বর আমরা বিচার চেয়ে থানায় অভিযোগ দেই। কিন্তু হত্যা মামলা না নিয়ে অপমৃত্যু মামলা হিসেবে নেয় পুলিশ। সবুজকে সাইদ মেম্বর হত্যা করেছে। এটি কোনোভাবেই অপমৃত্যু নয়। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মামলা না নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। পরিবার থেকে হত্যা মামলা দেওয়া হয়নি। অপমৃত্যু মামলার পর ময়নাতদন্ত হয়েছে। এতে হত্যার প্রমাণ মিললে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’