রংপুরে মসজিদের সেই টাকা এখন সরকারের কোষাগারে
অর্থ উত্তোলন করেছেন যথাসময়ে। কিন্তু দীর্ঘদিন হলেও মসজিদের উন্নয়নে করেননি কোনো কাজ। অবশেষে সেই টাকা সরকারের কোষাগারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এমন ঘটনাই ঘটেছে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের দিলালপুর বিন্ধিরধর জামে মসজিদের ক্ষেত্রে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যের ছোবল থেকে সরকারি টিআর প্রকল্পের টাকা উদ্ধার করতে পারলেও মসজিদ কমিটিকে সেই টাকা বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বাবুল চন্দ্র রায়।
২০২০-২১ অর্থবছরে দিলালপুর বিন্ধিরধর জামে মসজিদে টেস্ট রিলিফ (টিআর) প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৬ হাজার ২৫০ টাকা উন্নয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করতে স্থানীয় ইউপি সদস্য আজহার আলী মেম্বার মসজিদ কমিটিকে বাদ দিয়ে নিজের ছেলে ও ভাতিজাকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের একটি আলাদা কমিটি বানান। কমিটির শীর্ষে আজহার নিজের নামও বসিয়েছেন। আজহারের সেই সাজানো কমিটি পিআইও অফিসে জমা দিয়ে বরাদ্দের প্রথম কিস্তিতে ২৩ হাজার ৫০০ টাকা উত্তোলন করা হয়। টাকা উত্তোলনের দীর্ঘদিন হলেও মসজিদের উন্নয়নমূলক কোনো কাজ করেননি আজহার।
পরে মসজিদের নামে আজহার মেম্বারের টাকা উত্তোলনের বিষয়টি মুসাল্লিরা জানতে পারলে তখন তাকে নিয়ে আলোচনায় বসেন তারা। মেম্বার মসজিদে বসেই সোজাসাপ্টা জানিয়ে দেন ‘বরাদ্দ যতই আসুক, মসজিদে আমরা ২০ হাজার টাকাই দিব। আর বাকি টাকা শামছুল ও শচীন মেম্বারসহ আমরা তিনজন ভাগ করে নিব।’ মেম্বারের কথায় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে মসজিদ কমিটি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে কথা বলেন। ফলে সেই কার্যালয় থেকে তিনজন এসে মেম্বারের উত্তোলনকৃত টাকার ১৭ হাজার ৩০০ টাকা নিয়ে তাদের কার্যালয়ে জমা রাখেন।
ক্যাপশন : রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের দিলালপুর বিন্ধিরধর জামে মসজিদের
এদিকে, গত বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) মসজিদের সভাপতি আলহাজ মোস্তাফিজার রহমান ইউএনও বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই ওই বরাদ্দের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত রোববার সেই টাকা সরকারের কোষাগারে ফেরত দিয়েছেন পিআইও কার্যালয়। বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করে মসজিদের কোনো উন্নয়ন না করায় টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে জানান পিআইও বাবুল চন্দ্র রায়।
মসজিদ সভাপতি আলহাজ মোস্তাফিজার বলেন, ‘আমাদের না জানিয়ে আজহার মেম্বার তার ইচ্ছামতো কমিটি বানিয়ে টাকা উত্তোলন করেন। আমরা গত বুধবার ইউএনও স্যারের অফিসে লিখিত অভিযোগও দিয়েছি। মেম্বারদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করতে পারলেও টাকা মসজিদে নেওয়ার আগেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেল।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বাবুল চন্দ্র রায় জানান, কাজ না করায় প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা সরকারের কোষাগারে ফেরতের নির্দেশ দিয়েছি। অফিস থেকে দ্বিতীয় কিস্তির টাকাও ফেরত দেওয়া হবে।