রক্তদাতাদের বাহনসেবা দিচ্ছেন কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবীরা
মুমূর্ষু রোগীর প্রয়োজনে রক্তের কোনো বিকল্প নেই। রক্তের প্রয়োজনে রক্তদাতাকেই এগিয়ে আসতে হয় স্বশরীরে। তাই তো কঠোর এই লকডাউনের সময়েও রক্তদাতাদের ল্যাবে পৌঁছাতে বাহনসেবা দিয়ে যাচ্ছে দেশের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন।
রক্তদাতাদের বাসা কিংবা অফিস থেকে কোয়ান্টাম ল্যাবে আনা-নেওয়ার জন্যে দিনরাত জরুরি এ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন মানবতার কল্যাণে নিযুক্ত এ প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবীরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে রক্তদাতারাও এগিয়ে আসছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
রোগভেদে একেক রোগীর জন্য রক্তের একেক উপাদান লাগে। যেমন অগ্নিদগ্ধ রোগী ও হিমোফিলিয়া রোগীকে শুধু ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা (এফএফপি) বা ক্রায়ো-প্রিসিপিটেড দিলে চলে। আবার রক্তস্বল্পতা বা থ্যালাসেমিয়া রোগীকে দিতে হয় রক্তকণা বা প্যাকড সেল। কোয়ান্টাম ল্যাবে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এক ব্যাগ রক্তকে এমন আটি উপাদানে আলাদা করার ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থাৎ ল্যাবে এসে দান করা এক ব্যাগ রক্তকে একইসাথে কয়েক জনের জীবন বাঁচাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ জন্যই ল্যাবে এসে রক্ত দিতে উদ্বুদ্ধ করে আসছে কোয়ান্টাম।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কোয়ান্টামের বাহনসেবা নিয়ে উত্তর বাড্ডার সাতারকূল থেকে এসেছিলেন এস এম নূরুল হুদা (৪৫)। তিনি একজন চাকরিজীবী। স্বেচ্ছা রক্তদাতা। তাঁর রক্তের গ্রুপ এ নেগেটিভ। তিনি বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে ফোন দিলে আমি কোয়ান্টামের বাহনে ল্যাবে চলে আসি। করোনাসহ লকডাউনের এই সময়ে মানবিক মূল্যবোধ থেকেই মুমূর্ষু মানুষের প্রয়োজনে রক্ত দিতে পেরে আমি মানসিকভাবে প্রশান্তি অনুভব করছি।’
ল্যাব কর্তৃপক্ষ জানায়, সাধারণ সময়েই প্রয়োজনীয় রক্তের চাহিদা মেটাতে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি, নতুন রক্তদাতাদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। আর এখন লকডাউনের সময়ে রক্তদাতাদের ল্যাবে আনা-নেওয়ার জন্য কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। রক্তদাতার সাথে ফোনে কথা বলে মোটরসাইকেল বা গাড়ি নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন তাঁদের বাসায়। রক্তদানের পর পুনরায় তাঁদের নিরাপদে পৌঁছে দিচ্ছেন। করোনাকালে রক্তদাতা ও স্বেচ্ছাসেবীদের এই ত্যাগ প্রয়োজন মেটাচ্ছে শত রক্তগ্রহীতার।
জানা গেছে, কোয়ান্টাম ল্যাবে গত এক মাসে (৩ জুন-২ জুলাই, ২০২১) রক্ত ও রক্ত উপাদান সংগ্রহ করা হয়েছে ৪৬৪৮ ইউনিট। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে চাহিদা ছিল ৫২,২৫১ ইউনিট; এর বিপরীতে ল্যাব সরবরাহ করতে পেরেছে ৪৮ হাজার ১৭৩ ইউনিট।
২০০০ সালে শুরু করে দুই দশকের নিরলস প্রচেষ্টায় কোয়ান্টামের রয়েছে চার লাখেরও বেশি রক্তদাতার একটি সুসংগঠিত ‘ব্লাড ডোনার পুল’। এ পর্যন্ত কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম প্রায় ১২ লাখ ৯৮ হাজার রক্ত ও রক্ত উপাদান সরবরাহ করে মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করতে পেরেছে। তবে এর পাশাপাশি সুস্থ সচেতন আরও মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। কারণ, করোনার এই সময়ে ডেঙ্গুসহ মুমূর্ষু মানুষের রক্তের চাহিদা আরও অনেক বেশি।
প্রসঙ্গত, রক্তদান যে রক্তগ্রহীতাদের জীবনকেই শুধু বাঁচাচ্ছে তা নয়, নিয়মিত রক্তদান একজন রক্তদাতাকেও দিতে পারে অসাধারণ সব শারীরিক উপকার। ক্যানসার, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগের ঝুঁকি কমে রক্তদানে। আমেরিকান জার্নাল অব এপিডেমিওলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়মিত রক্তদাতাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৩৩ ভাগ কম এবং তাঁদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি কম ৮৮ ভাগ। রক্তদান করলে দাতার শরীরে লৌহের পরিমাণ কমে যাওয়াকেই এর কারণ হিসেবে বলেন বিজ্ঞানীরা। অন্যদিকে, রক্ত দিলে বাড়তি ওজন হ্রাস, ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো, সুস্থতা যাচাইসহ প্রাণবন্ততা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।