রাজশাহীতে কৃষি কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার, শিক্ষক স্বামী আটক
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় খাদিজা আক্তার নামের একজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের পরিবারের দাবি, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খাদিজার স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
নিহত খাদিজা আক্তার উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আব্দুল ওহাবের স্ত্রী। তিনি পবা উপজেলা কৃষি অফিসে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর স্বামী আব্দুল ওহাব রাজশাহী পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় তাদের নিজ বাড়ি ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
খাদিজা আক্তারের ভাই আবুল কালামের দাবি, তাঁর বোন আত্মহত্যা করেনি। তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কারণ লাশের শরীরে আত্মহত্যার কোনো আলামত নেই। তাঁকে কৌশলে মেরে ফেলা হয়েছে। তাছাড়া ওই বাড়ির পাশের কোনো লোক খাদিজাকে ফাঁসিতে ঝুলতে দেখেনি।
প্রতিবেশী আব্দুল্লাহ জানান, আব্দুল ওহাব ও খাদিজা আক্তারের বিয়ে হয়েছে প্রায় ২০ বছর আগে। খাদিজার বাপের বাড়ি বগুড়া জেলা সদরে। আব্দুল ওহাব ও খাদিজা দীর্ঘদিন ধরে চাকরির সুবাদের রাজশাহী নগরীতে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তবে প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন তারা। আব্দুল ওহাব একজন শিক্ষিত মানুষ ও শিক্ষক হলেও স্ত্রীর ওপর মাঝে মধ্যে অমানসিক অত্যাচার করতেন। প্রকাশ্য মারধর করতেন।
প্রতিবেশী আব্দুল্লাহ আরও জানান, স্বামীর নির্যাতন ও লাঞ্ছনা সহ্য করেও তিনটি সন্তানের দিকে তাকিয়ে সব ভুলে স্বামীর বাড়িতেই থাকতেন খাদিজা। গতকাল বিকেলেও তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। এরপর রাতে কী হয়েছে তা পাশের বাড়ির কেউ জানেন না। ভোরে আব্দুল ওহাবের বাড়ির লোকজন প্রতিবেশীদের বলেছে, খাদিজা আত্মহত্যা করেছেন।
নিহতের ছেলে গালিব (৯) জানায়, ঘটনার রাতে বাড়িতে তারা তিন ভাই, মা-বাবা ও দাদি ছাড়া অন্য কেউ ছিল না। রাতে তারা সবাই ঘুমিয়ে ছিল। বাবা ও মার মধ্যে কোনো ঝগড়া বা মারামারি তারা দেখতে পায়নি। অনেক রাতে দাদি তাদের তিন ভাইকে ঘুম থেকে ডেকে তুলেছে। এরপর সে বাবা-মার ঘরে গিয়ে দেখে মা মরে গেছে। তবে কীভাবে মরেছে, তা সে জানে না বলে জানায়।
নিহতের স্বামী আব্দুল ওহাব জানান, গতকাল রাতের খাবার শেষ করে শুয়ে পড়ি। এরপর তাঁর স্ত্রী কখন উঠে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছে তা তিনি বুঝতে পারেননি। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছোট ছেলে ঘুম থেকে উঠে কান্নাকাটি শুরু করে। এরপর স্ত্রীকে রুমে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এক পর্যায়ে পুরানো ঘরের তীরে স্ত্রীর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান দাবি করে তিনি। তিনি আরও জানান, রাতে তিনি আর পুলিশকে বিষয়টি জানাননি। সকালে থানায় খবর দিয়েছেন।
পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন জানান, খবর পাওয়ার পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের মাথায় আঘাতের চিহ্ণ রয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে। তবে হত্যা না আত্মহত্যা, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে সঠিকভাবে জানা যাবে।
রহস্য উদঘাটনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামীকে আটক করা হয়েছে বলে জানান ওসি।