রাজশাহীতে পানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপির মানববন্ধন, হরতালের হুমকি
রাজশাহীতে পানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে হরতালের হুমকি দিয়েছে মহানগর বিএনপি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ওয়াসার বর্ধিত পানির দাম না কমালে সব শ্রেণির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এই হরতালের হুঁশিয়ারি দিয়েছে দলটি।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর মালোপাড়ায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করে মহানগর বিএনপি এ হুঁশিয়ারি দেয়।
চলতি মাস থেকে রাজশাহী ওয়াসা পানির দাম তিনগুণ বাড়িয়েছে। এর প্রতিবাদে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর মালোপাড়া এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনের আয়োজন করে মহানগর বিএনপি। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে সদস্যসচিব মামুন অর রশিদ, যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বিশ্বনাথ সরকার, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটনসহ বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।
মানববন্ধনে বিএনপিনেতারা বলেন, রাজশাহীতে ওয়াসার পানি দূষিত ও দুর্গন্ধযুক্ত। এই পানি পান করা যায় না। খেলে নানা রকম পেটের অসুখ হয়। এই পানিতে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া কলিফর্ম পাওয়া গেছে। এই পানিতে গোসল আর ধোয়ামোছার কাজ ছাড়া কিছুই করা যায় না। সেই পানির দাম এক লাফে তিন গুণ বৃদ্ধি করা অযৌক্তিক। ওয়াসা যদি রাজশাহীর মানুষের অর্থনৈতিক কথা ভেবে এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তবে রাজপথে আন্দোলন চলবে।
বক্তারা বলেন, রাজশাহীতে কোনো শিল্পকারখানা নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের মধ্যে নাভিশ্বাস উঠে গেছে। রাজশাহীর মানুষের এত ক্রয়ক্ষমতা নেই যে ওয়াসার পানির বিল ৫০০ টাকার জায়গায় দেড় হাজার টাকা পরিশোধ করবে। ওয়াসা তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে রাজশাহীতে লাগাতার আন্দোলন হবে। ওয়াসার পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম না কমালে রাজশাহীতে সব শ্রেণির মানুষকে সাথে নিয়ে বিএনপি হরতালের ডাক দেবে।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা বলেন, এই সরকার ইচ্ছেমতো যখন খুশি তখন সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকার এর আগে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। ডিজেলের দাম এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়েছে। দফায় দফায় ভোজ্যতেলের দামও বাড়ানো হচ্ছে ইচ্ছেমতো। খাদ্যমন্ত্রী বলছেন, চালের দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। অথচ দাম বেড়েই চলেছে। যে চাল এক সময় ২০ টাকা কেজি ছিল, তা এখন ৬০ টাকায় কিনে খেতে হচ্ছে। তাহলে এই সরকারকে কী ক্ষমতায় রাখা যায়?
এরশাদ আলী ঈশা আরও বলেন, পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু রাজশাহীতে ওয়াসার পানি দেখলে বোঝা যায় পানির অপর নাম জীবন নয়। এই পানি খাওয়া যায় না। দুর্গন্ধ বের হয়। তবুও মানুষ সহ্য করে এই পানি ব্যবহার করে মূল্য পরিশোধ করেছে। কিন্তু পানির মূল্য তিন গুণ বাড়ালে তা পরিশোধ করার সক্ষমতা রাজশাহীর মানুষের নেই। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ পানির মূল্যবৃদ্ধির জন্য রাজশাহীর কারও সঙ্গে আলোচনা করেনি। মানববন্ধন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিও দাবি করা হয়।
উল্লেখ্য, জানুয়ারির শুরুতে রাজশাহী নগরে পানির দাম তিন গুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা)। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পানির দাম বাড়ানোর তথ্য প্রচার করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি ফেব্রুয়ারি মাস থেকে নগরবাসীকে পানির জন্য অতিরিক্ত তিন গুণ মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন রাজশাহীতে আন্দোলন শুরু করেছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি পানির দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে এবং বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের দাবিতে প্রথম মানববন্ধন করে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। একই দাবিতে ৯ ফেব্রুয়ারি মহানগর ও জেলা ওয়ার্কার্স পার্টি মানববন্ধন করে। ওয়ার্কার্স পার্টি প্রতিদিন নগরীতে গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণসহ সমাবেশও করছে। গত ১৭ জানুয়ারি তারা সমাবেশ করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছে।