রাজশাহীর পদ্মায় কমতে শুরু করেছে পানি
টানা কয়েকদিন বাড়ার পর এবার কমতে শুরু করেছে পদ্মার পানি। আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানি কমেছে ১১ সেন্টিমিটার।
পদ্মার পানি বিপৎসীমা ছুঁতে না পেলেও বাঘা উপজেলার পদ্মার চরে পানি ওঠায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। অধিকাংশ বাড়ির টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে আছে। ফলে চরের মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গেজ রিডার এনামুল হক জানান, রোববার সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৭২ মিটার। এর আগের দিন শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৮৩ মিটার। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় পানি কমেছে ১১ সেন্টিমিটার। বর্তমানে রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে। রাজশাহীতে পদ্মার পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার।
পদ্মায় পানি কমলেও নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের তালাইমারী শহীদ মিনার, পঞ্চবটি ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীরামপুর এলাকায় পদ্মার তীর সংলগ্ন নিচু এলাকাগুলোতে পানি উঠেছে। শুধু ২৪ নম্বর ওয়ার্ডেই প্রায় দুই হাজার পরিবার জলমগ্ন রয়েছে। এছাড়াও গোদাগাড়ী, পবা ও বাঘা উপজেলার এলাকার পদ্মা পাড়ের নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
রাজশাহী পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রিফাত করিম জানান, পদ্মার ভাঙন রোধের জন্য নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ টি-গ্রোয়েন ও এর আশপাশে ১৬ হাজার বালুর বস্তা ফেলা হবে। ইতোমধ্যে ১৪ হাজারের বেশি বস্তা ফেলা হয়েছে। তিনি জানান, রাজশাহী শহরের পদ্মাপাড়ের নিচু দুই-একটি মহল্লায় পানি ঢুকেছে। তবে গোদাগাড়ী, পবা ও বাঘায় পদ্মার চরাঞ্চলে পানি ঢুকেছে। এসব চরে অনেক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিজুল আযম জানান, তাঁর ইউনিয়নের পুরোটিই পদ্মার চরে। চরে পানি ওঠায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি রয়েছে। অধিকাংশ বাড়ির টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে আছে। ফলে চরের মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, লক্ষ্মীনগর একটি চর। এই চরে ২৬২ পরিবার বসবাস করে। এক সপ্তাহ ধরে তারা পানিবন্দি হয়ে আছে। এই চরে চৌমাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে দিয়াড় কাদিরপুর বাজার। এ বাজারের পাশে একটি টিউওবয়েল রয়েছে। পানিতে তলিয়ে থাকা ওই টিউবওয়েলের পানি সবাই পান করে। তবে চারদিকে পানি; বাড়িসহ সব জমির ফসল পানিতে ডুবে আছে। এমন অবস্থায় সেখানে গিয়ে পানি সংগ্রহ করা কষ্টকর। এ ছাড়া ডুবে থাকা টিউবওয়েলের পানিতে জীবাণু থাকতে পারে। এ পানি পানে দেখা দিতে পারে রোগবালাই। এমনটিই আশঙ্কা করছে সেখানকার মানুষ। চকরাজাপুর ইউনিয়নের ১৫টি চরের মানুষের একই অবস্থা। এর মধ্যে লক্ষ্মীনগর চরে ভোটার এক হাজার ৭৬২ জন। অথচ সবাই বিশুদ্ধ পানি সংকটে ভুগছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের (চৌমাদিয়াচর) সদস্য আবদুর রহমান বলেন, তাঁর নির্বাচিত এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে পানি ওঠায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ টিউবওয়েলের অর্ধেকের বেশি অংশ পানির নিচে তলিয়ে আছে। উপায় নেই। তলিয়ে থাকা টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে হচ্ছে।
দিয়ার কাদিরপুর চরের মেরিনা আক্তার বলেন, নিজের বাড়িতে টিউবওয়েল নেই। বাজারের পাশে একটি টিউবওয়েল থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে পান করি। ওই টিউবওয়েল অর্ধেকের বেশি অংশ ডুবে আছে। কোনো উপায় নেই, এ টিউবওয়েল থেকেই পানি সংগ্রহ করছি।
একই কথা জানান আরিফা বেগম, আক্তার জাহান, আবেদা বেগম ও সালেহা বেগম নামের কয়েকজন গৃহবধূ।
চকরাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, পদ্মার চরের প্রায় ৯০ শতাংশ পরিবারের বাড়িতে পানি উঠেছে। শত শত পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। কিছু কিছু বাড়ি একেবারে ডুবে আছে। ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
বাঘা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, গত ২০ আগস্ট চৌমাদিয়া, দিয়ার কাদিরপুর, আতারপাড়া চর এলাকায় পানিবন্দি ৫০০ পরিবারের মধ্যে সরকারিভাবে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, লবণ, তেল ও কিছু শুকনো খাবার ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। তবে জলমগ্ন চরের মানুষের বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।