পদ্মায় চলে যাচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি
পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার সুতালড়ী রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গতকাল সোমবার পর্যন্ত বিদ্যালয়টির এক-তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বিদ্যালয়টির সম্পূর্ণ অংশ নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৭ সালে উপজেলার ধুলশুড়া এলাকায় বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বিদ্যালয়টি উপজেলার সুতালড়ী ইউনিয়নে স্থানান্তর করা হয়। ২০০৭ সালে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনর্বাসন/পুনঃনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যালয়টির জন্য ৪৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থের দোতলা পাকা ভবনটি নির্মিত হয়। তখন নদীর সীমানা ছিল বিদ্যালয় থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে।
প্রতিবছরের মতো এবারও পদ্মা নদীর পানি বেড়ে ভাঙন শুরু হয়। প্রথমে ভাঙনের তীব্রতা কম থাকলেও গত ১৫ দিন ধরে তা বেড়ে গিয়েছে। পদ্মার স্রোতের কারণে কয়েক দিন একটু একটু করে বিদ্যালয় ভবনের একটি অংশ ভেঙে যায়। এভাবে ভাঙতে থাকলে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বিদ্যালয় ভবনের সম্পূর্ণ অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
স্থানীয়রা জানায়, ১৫ দিন আগেও বিদ্যালয় থেকে নদীর সীমানা ছিল ৫০-৬০ ফুট দূরে। গত ১ আগস্ট থেকে বিদ্যালয় ভাঙনরোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাতেও বিদ্যালয়টির শেষ রক্ষা হলো না। তবে জিও ব্যাগ আরও কিছুদিন আগে ফেললে হয়তো বিদ্যালয়টি রক্ষা করা যেত।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার অধিকারী বলেন, ‘বিদ্যালয়টির ভাঙনের খবর শুনে গতকাল সোমবার সকালে আমিসহ আমাদের শিক্ষাপরিবারের অনেকেই ভাঙনকবলিত বিদ্যালয়টি দেখতে গিয়েছিলাম। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এরই মধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে। অথচ, গত বছরও বিদ্যালয়টি থেকে নদী প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে ছিল। এ বছর বিদ্যালয়টির কাছাকাছি যখন ভাঙন শুরু হয়েছে তখন উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডও বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধের চেষ্টা করেছে। কিন্তু অবশেষে বিদ্যালয়টিকে ভাঙন থেকে ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না। খুব দ্রুতই একটা জায়গা নির্ধারণ করে বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করার চিন্তা চলছে।’
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘ভাঙন কবলিত দুর্গম চরাঞ্চল আমাদের কর্মপরিধির বাইরে। তারপরেও এ বিষয়ে ইউএনওর নিকট থেকে চিঠি পাওয়ার পর মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ২০০ মিটার অংশে প্রায় নয় হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়। কিন্তু স্রোতের কারণে নে তা কার্যকর হয়নি, বিদ্যালয়টিকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করা গেল না।’
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে যেদিন চিঠি পেয়েছি, ওইদিনই আমি জেলা প্রশাসকসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। তারাও চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিদ্যালয়টিকে রক্ষা করা যায়নি। বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের জন্য জমি নির্ধারণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’
বিদ্যালয় ছাড়াও, নদীভাঙনের কারণে গত এক মাসে ওই এলাকার শতাধিক পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়েছেন। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কৃষি জমি, বিভিন্ন ফলের বাগানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। অনেকই ভাঙনের ভয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র চেলে গেছেন। ভাঙনরোধে সেখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান এলাকাবাসী।