রাজশাহী বিভাগে করোনায় মৃত্যু বেড়েছে
রাজশাহী বিভাগে ২৪ ঘণ্টার শেষ হিসাবে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে। আজ বুধবার সকাল থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় এ বিভাগে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ১৯ জন। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯৩৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজমা আক্তার স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজশাহী বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় চার হাজার ৬৩৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৯৩৩ জনের। আগের দিন চারহাজার ৮৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় এক হাজার ৫৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে নমুনা পরীক্ষা কমার পাশাপাশি শনাক্তের হারও কমেছে। বিভাগে করোনা পরীক্ষার জন্য আরটি-পিসিআর, র্যাপিড অ্যান্টিজেন ও জিন-এক্সপার্ট মেশিনে নমুনা পরীক্ষা করা হেচ্ছ।
আজ সকাল থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ৯৩৩ জন নিয়ে বিভাগে মোট করোনার রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৭৫৪ জনে। শনাক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে শনাক্ত হয়েছে সর্বোচ্চ ২৫০ জন।
এ বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৪ জন, নওগাঁয় ১৪০, নাটোরে ৬৫, জয়পুরহাটে ৭৯, বগুড়ায় ১২৭, সিরাজগঞ্জে ৮১ ও পাবনায় ১৭৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রাজশাহী বিভাগে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ১২ এপ্রিল। এরপর গত বছরের ২৯ জুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়ায়। এভাবে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জুলাই ১০ হাজার, ৪ আগস্ট ১৫ হাজার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০ হাজার, চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ২৫ হাজার, ১৯ এপ্রিল ৩০ হাজার, ৩০ মে ৩৫ হাজার, ৯ জুন ৪০ হাজার, ১৭ জুন ৪৫ হাজার, ২৪ জুন ৫০ হাজার ছাড়ায় এবং সর্বশেষ আজ ৫৫ হাজার ছাড়াল। এর মধ্যে চলতি মাসে ২০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
রাজশাহী বিভাগে মঙ্গলবার সকাল থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ ১৯ জন মারা গিয়েছিলেন। এরপরের ২৪ ঘণ্টায় সেই রেকর্ড ভেঙে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিভাগে একদিনে এটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ মৃত্যু। নতুন মৃত্যু ২২ জন নিয়ে বিভাগে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৭৩ জনে। ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে বগুড়ায় আটজন, রাজশাহীতে পাঁচ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে চার, নাটোরে চার ও নওগাঁয় একজন মারা গেছেন। মৃত ৮৭৩ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে বগুড়া জেলায়। সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে রাজশাহী জেলায় ১৫৭ জনের। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১১২ জন, নওগাঁয় ৭৭, নাটোরে ৫৪, জয়পুরহাটে ২৮, সিরাজগঞ্জে ৩০ ও পাবনায় ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়।
স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের ২৬ এপ্রিল রাজশাহী বিভাগে প্রথম করোনা রোগী মারা যান। বিভাগের এখন পর্যন্ত ৮৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভাগে মারা যান ৩৬৬ জন। আর এ বছর এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৫০৭ জন। এর মধ্যে চলতি জুন মাসেই মারা গেলেন ৩০৯ জন।
আজ বুধবার সকাল থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ৩৭৮ জন। আগের দিন সুস্থ হয়েছিলেন ২৭৭ জন। নতুন ৩৭৮ জন নিয়ে বিভাগে মোট সুস্থ হয়েছেন ৩৮ হাজার ৯৭২ জন। বর্তমানে বিভাগের আট জেলায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ছয় হাজার ১১৯ জন। এর মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ১৬২ জন। বিভাগে হাসপাতালের বাইরে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১০ হাজার ৬৬৩ জন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজমা আক্তার বলেন, ‘রাজশাহী বিভাগে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। এ কারণে মৃত্যুও বাড়ছে। গ্রামের মানুষ বেশি মারা যাচ্ছেন। তারা কম সচেতন। তাদের জোর করেও টিকা দেওয়া যায়নি। করোনায় আক্রান্ত হলেও তারা পরীক্ষা করান না। উল্টো তারা করোনা হলে বিষয়টি গোপন করার সব রকম চেষ্টা করছেন।’
নাজমা আক্তার আরও বলেন, ‘এখনকার করোনার ডেল্টা ধরন দেখে বোঝা যাচ্ছে, অক্সিজেনই রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু গ্রামের মানুষ শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে আসছেন। এ কারণে তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। এ বিষয়ে সচেতন না হলে সামনে কঠিন বিপদ অপেক্ষা করছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। করোনার উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করাতে হবে। এ বিষয়ে কোনো অবহেলা করা যাবে না।’