রাব্বানীর স্বপ্ন অসম্পূর্ণ, আবার চাইলেন ক্ষমা
আবারও ক্ষমা চেয়েছেন ছাত্রলীগের অব্যাহতি পাওয়া সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। এবার তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, চলার পথের নানা বন্ধুরতা, অসাবধানতা, ত্রুটি-বিচ্যুতি, আর বোধকরি শতভাগ প্রচেষ্টার অভাবে তাঁর স্বপ্নটা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
গতকাল শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে এ সব কথা লিখে স্ট্যাটাস দেন গোলাম রাব্বানী।
এর আগে গতকাল শনিবার ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পুনর্মিলনী সাংগঠনিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারমুক্ত করে পুর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেন। এতে ছাত্রলীগে ফিরে আসার সব আশা শেষ হয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর।
এর কিছুক্ষণ পর রাতে আবেগঘন একটি স্ট্যাটাস লিখেন গোলাম রাব্বানী। এনটিভির পাঠকদের জন্য রাব্বানীর স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
“ছাত্ররাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের অভিলাষ নিয়ে ছাত্রলীগকে ‘ইতিবাচকতার ব্রান্ড এম্বাসেডর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার একবুক স্বপ্ন নিয়ে যাত্রাটা শুরু হয়েছিলো।
চলার পথের নানা বন্ধুরতা, অসাবধানতা, ত্রুটি-বিচ্যুতি, আর বোধকরি শতভাগ প্রচেষ্টার অভাবে স্বপ্নটা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
স্নেহ-ভালোবাসার প্রিয়মুখ জয়-লেখকের হাত ধরে সে আজন্ম লালিত স্বপ্ন পূর্ণতা পাক, এই প্রত্যাশা। অন্তর্নিহিত দোয়া, শুভকামনা আর পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে তোদের জন্য।
শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির পতাকা হাতে পথ চলতে গিয়ে ছাত্রলীগ পরিবারের কাউকে বঞ্চিত করে থাকলে, কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি, নিজ গুণে ক্ষমা করে দেবেন। ভালো থাকুক প্রাণের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ভালো থাকুক আমার আত্মার পরম আত্মীয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পরিবারের সকল সদস্য।”
২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের আড়াই মাস পর ওই বছরের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছর মেয়াদী আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর পর দীর্ঘ প্রায় এক বছর পর গত বছরের ১৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিবাহিত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, চাকরিজীবীসহ বির্তকিতদের পদ দেওয়া, ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করা, কমিটি দিতে অর্থনৈতিক লেনদেনসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ ওঠে শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেরিতে যাওয়া এমনকি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের পরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ তাদের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের কাছে উন্নয়নকাজ থেকে কমিশন চাওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এরপর গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় শোভন-রাব্বানীর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেই সভায় তিনি শোভন-রাব্বানীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর ছাত্রলীগের ১ নম্বর সহসভাপতি আল নাহিয়ান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ওই ঘটনার পর ১৬ সেপ্টেম্বর কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগের সব নেতা-কর্মীর কাছে ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন গোলাম রাব্বানী। স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
“মমতাময়ী নেত্রী, আপনার মনে কষ্ট দিয়েছি, আমি অনুতপ্ত, ক্ষমাপ্রার্থী। প্রিয় অগ্রজ ও অনুজ, আপনাদের প্রত্যাশা-প্রাপ্তির পুরো মেলবন্ধন ঘটাতে পারিনি বলে আপনাদের কাছেও ক্ষমাপ্রার্থী।
মানুষ মাত্রই ভুল হয়। আমিও ভুলত্রুটির উর্ধ্বে নই। তবে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, স্বেচ্ছায়-স্বজ্ঞানে আবেগ-ভালোবাসার এই প্রাণের সংগঠনের নীতি-আদর্শ পরিপন্থী ‘গর্হিত কোন অপরাধ’ করিনি। আনীত অভিযোগের কতটা ষড়যন্ত্রমূলক আর অতিরঞ্জিত, সময় ঠিক বলে দেবে।
প্রাণপ্রিয় আপা, আপনি আদর্শিক পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবের সুযোগ্য তনায়া, ১৮ কোটি মানুষের আশার বাঁতিঘর। আপনার দিগন্ত বিস্তৃত স্নেহের আঁচল, এক কোণে যেন ঠাঁই পাই। আপনার ক্ষমা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে বাকিটা জীবন চলতে চাই।