রামেক হাসপাতালে বাড়ছে কোভিড রোগীর চাপ, আরও ১৮ জনের মৃত্যু
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে একের পর এক ওয়ার্ডকে কোভিড ডেডিকেটেড ওয়ার্ডে রূপান্তর করেও করোনা রোগীর চাপ সামাল দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
সেন্ট্রাল অক্সিজেনের সংযোগ দিয়ে হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা যেমন বাড়ানো হচ্ছে, অক্সিজেনের চাপও তেমনই বাড়ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে—অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন না হলে শয্যার অভাবে হাসপাতালে করোনা রোগীকে ভর্তি করা হচ্ছে না। ফলে হাসপাতালে ভর্তির আগে জরুরি বিভাগের বারান্দাতে অক্সিজেনের অভাবে প্রাণ যাচ্ছে রোগীর। এমন পরিস্থিতিতেও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। গত কয়েক দিনের চেয়ে শহরের রাস্তায় মানুষের চলাচল অনেক বেড়েছে। প্রয়োজন ছাড়া অনেক মানুষ জটলা করছে যেখানে সেখানে। অনেকেই দোকান কিছুটা খুলে রেখে ব্যবসা করছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত কিংবা সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের টহল দল মাঠে নামলে নিমিষেই আধখোলা দোকান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সটকে পড়ছে জটলা করা মানুষ। লকডাউন ঘিরে চোর-পুলিশের এই খেলায় প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম।
লকডাউন ঘিরে এমন পরিস্থিতিকে দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম ইয়াজদানী বলেন, সরকার ১৪ দিনের যে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে, সে ১৪ দিন আমরা সবাই যদি বিধিনিষেধগুলো মেনে চলতাম, তাহলে করোনায় এত মৃত্যু ও শনাক্ত আমাদের দেখতে হতো না। এই হার অনেক নিচে নেমে আসতো। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নতুন করে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে আট জন পজিটিভ হয়ে এবং নয় জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে। উপসর্গ নিয়ে মৃত অপর একজনের করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। করোনা পজিটিভ হয়ে মৃত আট জনের মধ্যে চার জনের বাড়ি রাজশাহী। অন্য চারজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা। আর উপসর্গ নিয়ে মৃত নয় জনের মধ্যে রাজশাহীর পাঁচ জন, নওগাঁর দুজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন এবং নাটোরের একজন।
এ ছাড়া করোনা ইউনিটে মৃত যে একজনের করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে, তাঁর বাড়ি নাটোর জেলায়। করোনা ইউনিটে মৃত ১৮ জনের মধ্যে পুরুষ ১৪ জন এবং নারী চার জন। মৃতদের মধ্যে আট জনের বয়স ৬১ বছরের ঊর্ধ্বে। এ ছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে পাঁচ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে তিন জন এবং ৪১ থেকে ৫০ বছরের দুজন আছেন।
হাপাতালের পরিচালক জানান, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৭০ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৪৮ জন।
গতকাল বুধবার চার নম্বর ওয়ার্ডটিকে নতুন করে কোভিড ডেডিকেটেড ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে ৪৫৪টি করোনা বিশেষায়িত শয্যার বিপরীতে ৪৮৫ রোগী ভর্তি রয়েছে।
এদিকে, জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার জেলার এক হাজার ৪৩১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৮০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এক দিনে শনাক্ত কিছুটা বেড়েছে। আগের দিন মঙ্গলবারের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিল ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ।