রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রবীন সাংবাদিক মোহাম্মদ সানাউল্লাহর দাফন সম্পন্ন
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাজবাড়ীর প্রবীন সাংবাদিক ও জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সানাউল্লাহর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফরিদপুর ডায়াবেটিস হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
গতকাল বিকেলে রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুরস্থ তাঁর বাসভবনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করেন জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাঁর মরদেহ আনা হয় রাজবাড়ী প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে। সেখানে রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ, জেলা প্রেসক্লাব, রাজবাড়ী রিপোর্টার্স ইউনিটি, রাজবাড়ী রিপোর্টাস ক্লাব, জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ অন্যান্যরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বাদ এশা রাজবাড়ী শহরের বড় মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রথম, নিজ গ্রাম বিনোদপুর এলাকায় দ্বিতীয় এবং পাওয়ার হাউস জামে মসজিদে তৃতীয় নামাজে জানাযা হয়। পরে ভবানীপুরস্থ ২ নম্বর পৌর কবরস্থানে তাঁর দাফন করা হয়। বড় মসজিদে জানাযার নামাজের আগে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী ও মরহুমের বড় ছেলে মো. আহসান হাবীব টুটুল বক্তব্য দেন।
মোহাম্মদ সানাউল্লাহর বড় ছেলে আহসান হাবীব টুটুল বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভি ও সংবাদ সংস্থা ইউএনবির রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা পেশায় রয়েছেন। ছোট ছেলে আহসান রাজীব বুলবুল বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই এর কানাডা প্রতিনিধি এবং কানাডা আলবাটার অনলাইন নিউজ পোর্টাল প্রবাস বাংলা ভয়েজ এর প্রধান সম্পাদক।
প্রবীণ সাংবাদিক মোহাম্মদ সানাউল্লাহর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করাসহ শোকহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম, রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল মোর্শেদ আরুজ, পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইবাদত আলী, রাজবাড়ী প্রেসক্লারের সভাপতি খান মোহাম্মদ জহুরুল হক, সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক মাতৃকণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক খোন্দকার আব্দুল মতিন, জেলা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি করিম ইছাহাক, সম্পাদক সৌমিত্র শীল চন্দ্রসহ রাজবাড়ী রিপোর্টার্স ইউনিটি, রাজবাড়ী রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি লিটন চক্রবতী ও জেলায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা।
১৯৭০ সালে মোহাম্মদ সানাউল্লাহ উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেন। স্বাধীনতার আগে ছাত্র জীবনে তাঁর নেশা থেকে সাংবাদিকতা পেশায় জীবন শুরু। সে সময় তিনি সাপ্তাহিক পাক জমহুরিয়াত, পয়গম, দৈনিক পাকিস্তান, র্বাতা সংস্থা এনার রাজবাড়ীর সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দৈনিক বাংলার বাণী প্রত্রিকার রাজবাড়ী প্রতিনিধি ছিলেন। এরপর ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর দৈনিক বাংলা পত্রিকার রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। প্রিন্ট মিডিয়ার পাশাপাশি তিনি ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত রেডিও বাংলাদেশ এর রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। মহাকুমা থেকে ১৯৮৪ সালে রাজবাড়ী জেলা রুপান্তরিত হওয়ার পর ১৯৮৪ সাল থেকে প্রায় ৩০ বছর বাংলাদেশ টেলিভিশনের রাজবাড়ী জেলা সংবাদ প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০০৫ সাল থেকে বিডি নিউজ ২৪ডটকম এ ১৭ বছর কাজ করেন। তিনি দেশে সাংবাদিকতার পাশাপাশি দেশের বাইরে কানাডা আলবাটার প্রথম বাংলা অনলাইন নিউজ পোর্টাল প্রবাস বাংলা ভয়েজ এর উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের এ বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক মোহাম্মদ সানাউল্লাহ ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পাশাপাশি প্রিন্ট মিডিয়াতেও ২০০৫ সাল থেকে দৈনিক যুগান্তর প্রত্রিকায় এবং ২০০৬ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দৈনিক সমকাল পত্রিকায় রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৭ সালে জাতীয় জনসংখ্যা দিবসে দুই সন্তানের পিতা এবং দেশ গঠনে আদর্শ পরিবার হিসেবে তৎতালীন রাষ্ট্রপতি কতৃক রাষ্ট্রপতি সনদ ও পুরস্কারপ্রাপ্ত হন।