রেইনট্রিতে ধর্ষণ, তিন বছরেও শেষ হয়নি বিচার
রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার বিচার তিন বছরেও শেষ হয়নি। সাক্ষ্য গ্রহণের স্থবিরতা দেখায় মামলার বিচারকাজে কোনো অগ্রগতি নেই।
২০১৭ সালের ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে পরের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা মামলার বাদী এবং তাঁর বান্ধবী ও বন্ধু শাহরিয়ারকে আটক রাখেন। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। বাদী ও তাঁর বান্ধবীকে জোর করে ঘরে নিয়ে যান আসামিরা। বাদীকে সাফাত আহমেদ ও বান্ধবীকে নাঈম আশরাফ ধর্ষণ করেন। আরেক আসামি সাদমান সাকিফকে দুই বছর ধরে চেনেন মামলার বাদী। তাঁর মাধ্যমেই ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে সাফাতের সঙ্গে দুই ছাত্রীর পরিচয় হয়।
এ ঘটনায় ২০১৭ সালের ৬ মে বনানী থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন এক ছাত্রী। মামলার পরে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ ওরফে এইচ এম হালিম, সাফাত আহমেদের বন্ধু সাদমান সাকিফ, দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর পরে ২০১৭ সালের ৮ জুন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাতসহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এ্যানি। এর পরে মামলাটি ঢাকার নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এ বদলি হয়ে এলে ২০১৮ সারের ১৩ জুলাই বিচারক শফিউল আজম অভিযোগ গঠন করে মামলাটির বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। এর পরে আদালতের অধিক্ষেত্র পরিবর্তন হলে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এ মামলাটি বিচারকাজ চলে। আগামী ৭ মে এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন নির্ধারিত আছে।
এ বিষয়ে আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আফরোজা ফারহানা আহমেদ (অরেঞ্জ) সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে সাক্ষী না আসায় ও আইনি জটিলতায় মামলাটির বিচারকাজ শেষ হচ্ছে না। এ মামলায় দুই ভিকটিমের বন্ধু আহমেদ শাহরিয়ারকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য একাধিকবার সমন পাঠানো হয়েছে। তিনি সাক্ষ্য দিতে হাজির হচ্ছেন না।
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ হওয়ার আশা করেছিলাম। কিন্তু সাক্ষী না আসায় বিচারকার্য শেষ হচ্ছে না। আর আদালত পরিবর্তন হওয়ার প্রভাবও কাজ করছে। আসামিদের বিরুদ্ধে কিছু সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। আশা করছি, আসামিদের এই মামলায় সর্বোচ্চ সাজা হবে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সত্য নয়। মামলাটির বিচারকার্য চলমান। আসামিরা নির্দোষ, আমরা সেই বিষয়টি প্রমাণ করতে পেরেছি। আশা করছি, তারা খালাস পাবেন।’